সমকালীন প্রতিবেদন : এক সময় যে বাওর জলে থৈ থৈ করত, আজ তা শুকনো ফুটিফাটা জমিতে পরিণত হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার কঙ্কনা বাওড়ের হাল এখন এমনই। দীর্ঘ সংস্কারের অভাব এবং প্রবল দাবদাহের প্রভাব পড়েছে এই জলাশয়ে। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে এলাকার মৎস্যজীবীদের।
প্রায় ৬০০ বিঘা জমির উপর এই প্রাকৃতিক জলাশয়টি অশ্বক্ষুরাকৃতির। হাতের কঙ্কনের মতো দেখতে। আর তাই এর নামকরণ হয়েছে কঙ্গনা। মূলত গোবরডাঙার মেদিয়া উদ্বাস্তু কলোনির কয়েকটি গ্রাম এই জলাশয়টিকে ঘিরে রেখেছে। এর একদিকে গোবরডাঙা থানা, অন্যদিকে বসিরহাটের স্বরুপনগর থানা।
একসময় এই জলাশয়ের সঙ্গে যোগ ছিল যমুনা নদীর। তখন যমুনা নদীর জোয়ার ভাটার প্রভাব পড়তো এই জলাশয়ে। স্বাভাবিকভাবেই সারা বছর জলে টইটম্বুর থাকতো এই জলাশয়। তার সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে মাছের দেখা মিলতো এই জলাশয়ে। পাশাপাশি, মাছের চাষও হতো।
বাওরের দুই পাড়ে রয়েছে প্রায় ৩০০ মৎস্যজীবী পরিবার। যারা এই বাওর থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। দীর্ঘ সংস্কারের অভাবে একটু একটু করে পলি পরে এই জলাশয়ের জলধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। এর পাশাপাশি, এবারের টানা দাবদাহে জলাশয়ের জল শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ফেটে চৌচির জলাশয়ের তলদেশ।
নিজেদের তাগিদে মৎস্যজীবীরা জলাশয়ের কিছু অংশে মাটি কাটার কাজ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। আর এই পরিস্থিতিতে এই জলাশয় এখন মৃতপ্রায়। পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বন্ধ হয়েছে। জল না থাকায় মাছেরও দেখা নেই। এলাকার মৎস্যজীবীরা তাই এখন বিকল্প পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এলাকার মানুষ দাবি তুলেছেন, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে এই জলাশয়ের সংস্কার প্রয়োজন। আর তাতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে, অন্যদিকে, মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন।
শীত পড়লেই ফি বছর হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির দল চলে আসতো এই জলাশয়ে। এই জলাশয়কে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠারও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই কঙ্কনা বাওরের যা হাল, তাতে নতুন করে সংস্কার না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে কঙ্কনা বাওর শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায় লিপিবন্ধ থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন