Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

বনগাঁর সাত বছরের প্রিয়া রথের মেলায় বাদাম বিক্রি করে ভাইরাল, শিশুশ্রম রুখতে পাশে প্রশাসন

 ‌ 

Selling-almonds-at-Priya-Rath-fair

সমকালীন প্রতিবেদন : রথের মেলায় উৎসবের রঙিন আলোর মাঝে, কাঁধে ঝুড়ি নিয়ে এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সাত বছরের এক মেয়ে। মুখে কোনও উচ্ছ্বাস নেই, চোখে শুধুই বাস্তবের ক্লান্ত ছায়া। খেলার বয়সে, যেখানে হাতে থাকার কথা পুতুল কিংবা রঙিন বই, সেখানে বাদাম বিক্রি করেই পরিবারের দায়ভার সামলাতে বাধ্য প্রিয়া হালদার। সেই এক মুহূর্তের ছবি ধরা পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তাতেই আলোড়ন—প্রশাসন থেকে সমাজ, সবাই যেন চমকে উঠল এই বাস্তব দেখে।

প্রিয়া হালদার, বনগাঁ পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের দেবগড় এলাকার বাসিন্দা। বাবা বাবুরাম হালদার বনগাঁ পুরসভারই অস্থায়ী কর্মী, ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশার তেল ছড়ানোর কাজ করেন। মা রাখি হালদার কাজ করেন অন্যের বাড়িতে পরিচারিকা হিসেবে। সংসারে চার সন্তান, প্রিয়া তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। অর্ধভাঙা টিনের চালের ঘরে অভাব-অনটনই নিত্যসঙ্গী। সেই কারণেই সাত বছর বয়সেই ছোট্ট প্রিয়াকে জীবিকার বোঝা কাঁধে নিতে হয়েছে।

বনগাঁর রথের মেলায় বাদাম ও ঝুড়ি ভাজা বিক্রি করতে দেখা যায় প্রিয়াকে। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তোলা একটি ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। শিশুশ্রমের এই দগদগে বাস্তব দেখে কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ ব্যথিত, কেউ বা অবাক। অনেকে শিশুটিকে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসের ‘রাধারাণী’ চরিত্রের সঙ্গেও তুলনা করেন—যে বাস্তবতার ভারে অল্পবয়সে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবনযুদ্ধে।

ছবিটি নজরে আসতেই রবিবার সকালে প্রিয়ার বাড়িতে ছুটে যান বনগাঁ পুরসভার প্রধান গোপাল শেঠ। সঙ্গে ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সম্পা মোহান্ত সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। ছোট্ট প্রিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয় বই, খাতা ও খেলনা। পুরপ্রধানের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় প্রিয়ার পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে পুরসভা। পরিবারকে সরকারি সহায়তা, বাড়ি সংস্কার ও শৌচালয় নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে শিশুটি ও তার পরিবারকে সরকারি আবাসন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

পুরপ্রধান বলেন, 'এই ছবি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। শিশুদের হাতে বই থাকার কথা, বাদামের ঝুড়ি নয়। প্রিয়া যেন শেষ উদাহরণ হয়। ভবিষ্যতে বনগাঁর আর কোনও শিশুকে যেন এরকম পরিণতি বরণ করতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের দায়িত্ব।'‌

প্রিয়ার বাবা বাবুরাম হালদার এবং মা রাখি হালদার জানালেন, 'অভাবের সংসারে কিছু অতিরিক্ত পয়সা রোজগারের জন্য মেয়েকে বাদাম বিক্রি করতে পাঠাই। ইচ্ছে ছিল, সেই টাকা দিয়ে ঘরটা সারাই করার। সম্ভব হলে কারেন্টের ব্যবস্থা করার। আজ চেয়ারম্যান এসে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। মেয়েকে আর বাদাম বিক্রি করতে পাঠাবো না। ও শুধু পড়াশোনা করবে।'‌

প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি প্রশংসনীয় হলেও মূল প্রশ্নটা আরও গভীর। আজ প্রিয়া, কাল আরও কেউ। সমাজের এক বড় অংশ এখনও অভাবের চাপে শিশুদের পাঠায় শ্রমের পথে। সেই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার দায় শুধু প্রশাসনের নয়, গোটা সমাজের। শিশুদের জন্য সুরক্ষিত ভবিষ্যত গড়ে তুলতে হলে সবাইকে একসঙ্গে ভাবতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে।

আজ প্রিয়ার মুখ সামনে এনেছে বাস্তবের নির্মম চেহারা। এখন দেখার, ভাইরাল হওয়া ছবি কি শুধুই ক্ষণিকের আবেগে থেমে যাবে? নাকি এই একটি ঘটনাই বদলে দেবে আরও অনেক শিশুদের ভবিষ্যৎ?





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন