সমকালীন প্রতিবেদন : বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য এল বড় সুখবর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে মঙ্গলবার অনুমোদন পেল অষ্টম বেতন কমিশনের টার্মস অফ রেফারেন্স বা শর্তাবলি। এর ফলে লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মী ও পেনশনভোগীর মুখে ফের হাসি ফিরেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন এই কমিশনটি একটি অস্থায়ী সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। কমিশনে থাকবেন একজন চেয়ারম্যান, একজন পার্ট-টাইম সদস্য এবং একজন মেম্বার-সেক্রেটারি। আগামী ১৮ মাসের মধ্যেই কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ জমা দেবে, তবে প্রয়োজনে ধাপে ধাপে অন্তর্বর্তী রিপোর্টও দিতে পারবে।
অষ্টম বেতন কমিশনের মূল দায়িত্ব হবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো, পেনশন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা পুনর্বিবেচনা করে নতুন সুপারিশ তৈরি করা। কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি।
সরকার এই কমিশন সুপারিশ প্রণয়নের সময় পাঁচটি মূল বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেবে—
১. দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা।
২. উন্নয়নমূলক ও সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ সংরক্ষণ।
৩. অবদানবিহীন পেনশন ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ভার।
৪. রাজ্য সরকারের আর্থিক কাঠামো, কারণ বেশিরভাগ রাজ্যই কেন্দ্রীয় কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে নিজেদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে।
৫. কেন্দ্রীয় পাবলিক সেক্টর ও বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বেতন ও সুবিধার তুলনামূলক মূল্যায়ন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে কেন্দ্রীয় কর্মীদের বেতন ৩০ থেকে ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে– যা এতদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হিসেবে ধরা হচ্ছে। বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি পেনশনভোগীরাও এর সুফল পাবেন।
তবে অর্থ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, এত বড়সড় বেতন সংশোধনের ফলে সরকারি ব্যয়ের চাপ বাড়তে পারে, যদিও একই সঙ্গে ভোগব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
ভারতে স্বাধীনতার পর থেকে এখনো পর্যন্ত সাতটি বেতন কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রতিটি কমিশনই সময়ের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারি কর্মীদের বেতনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। শেষ অর্থাৎ সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়েছিল ২০১৬ সালে।
ধারাবাহিক নিয়ম মেনে প্রতি দশ বছর অন্তর নতুন কমিশন গঠিত হয়। সেই সূত্রে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা করে কেন্দ্র সরকার। মঙ্গলবার তার শর্তাবলি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে শুরু হল তার আনুষ্ঠানিক কাজের পথচলা।
নতুন কমিশনের ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে যদি সুপারিশ কার্যকর হয়, তবে এক লপ্তে বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির ফলে যেমন কর্মীরা স্বস্তি পাবেন, তেমনই দেশের আর্থিক নীতিতেও নতুন ভারসাম্য আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন