সমকালীন প্রতিবেদন : আগামীকাল মহালয়া। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। রীতি অনুযায়ী পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জলে নেমে তর্পণ করেন ভক্তরা। তবে এবারে সেই তর্পণ ঘিরে তৈরি হয়েছে দুশ্চিন্তা। কারণ, দক্ষিণ ভারতের কেরালায় ‘নিগ্লেরিয়া ফোলেরি’ নামের এক ভয়ঙ্কর অ্যামিবার সংক্রমণে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাতেও উঠেছে প্রশ্ন— তর্পণের জলে নামা কি নিরাপদ?
চিকিৎসকরা অবশ্য আতঙ্কিত হতে নিষেধ করছেন। রাজ্যের এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, “কেরালার অ্যামিবার সঙ্গে বাংলার অ্যামিবার পার্থক্য রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নদীর জলে এই অ্যামিবা জন্মায় না। যে জলে স্রোত রয়েছে সেখানে এরা থাকে না। ফলে গঙ্গা বা অন্য নদীতে তর্পণ করতে গেলে কোনও ভয়ের কারণ নেই।” তবে তাঁর পরামর্শ, পাড়ার নোংরা, বদ্ধ ও অপরিষ্কার পুকুরে নামা একেবারেই উচিত নয়। এমন জলাশয় ব্লিচিং পাউডার ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে পরিষ্কার করা জরুরি।
ভাইরোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, বাংলায় যেসব অ্যামিবা পাওয়া যায় সেগুলি মূলত অ্যাকান্থামিবা। এগুলি সাধারণত গ্রানুলোম্যাটাস অ্যামিবিক এনসেফালাইটিস তৈরি করে। রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় বটে, তবে সময়মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পেলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। মারণক্ষমতাও কেরালার নাগলেরিয়া ফাউলেরির তুলনায় কম। সবচেয়ে বড় কথা, এই অ্যামিবার সংক্রমণ ছোঁয়াচে নয়—মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
গত দু’বছরে বাংলায় ২৫ জনেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন এই ‘মগজখেকো’ অ্যামিবায়। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশকেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে। তবে এই বছর ইতিমধ্যেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, “পুকুর-ডোবার মতো বদ্ধ জলাশয়ে এই প্রোটোজোয়ার উপস্থিতি থাকে। একবার সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইডে ঢুকে পড়লে মগজ ধ্বংস শুরু হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে, চিন্তাশক্তি কমতে পারে, খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে।” তাঁদের মতে, লাম্বার পাঞ্চার করে সিএসএফ নমুনা পরীক্ষা করলেই রোগ নিশ্চিত হওয়া যায়।
এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ— তর্পণের জন্য নদীর স্রোতস্বিনী জলে নামতে কোনও সমস্যা নেই। নোংরা, জমা ও দূষিত জলাশয়ে স্নান এড়ানো জরুরি। প্রয়োজন হলে বদ্ধ জলাশয় ব্লিচিং পাউডার বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে পরিশোধন করতে হবে। সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
আবহমানকাল ধরে বাঙালির মহালয়া মানেই ভোরের আকাশে চণ্ডীপাঠ, ঘাটে ঘাটে তর্পণ। কেরালার ঘটনাকে সামনে রেখে আতঙ্ক ছড়ালেও চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করছেন—বাংলার নদীর জলে কোনও বিপদের কারণ নেই। সতর্কতা অবলম্বন করলেই নিরাপদে সারাজীবনের মতোই তর্পণ সারতে পারবেন ভক্তরা।








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন