Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০২৫

নেতাজি কেবিন : সময়ের বাইরেও বেঁচে থাকা এক স্বাদের নাম

 

Netaji-Cabin

সমকালীন প্রতিবেদন : আধুনিকতার স্রোতে যখন চারপাশ বদলে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে, তখনও শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটের এক কোণে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক চায়ের দোকান‌– নাম নেতাজি কেবিন। সাত দশকের বেশি সময় ধরে যেটি শুধু চা বা টোস্ট-ওমলেট নয়, বরং পরিবেশন করছে এক অমূল্য ঐতিহ্য, স্মৃতি আর আন্তরিকতা।

নেতাজি কেবিনের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় ৭০ বছর আগে, প্রখ্যাত চা ব্যবসায়ী মন্টু বাগচী-র হাত ধরে। সেই সময় বিধান মার্কেট ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র– কর্মচঞ্চল, ব্যস্ত আর কোলাহলপূর্ণ। আর তার মধ্যেই একটি ছোট্ট দোকানে বসে মন্টু বাবু শুরু করেন চা বানানোর সাধনা। তাঁর লক্ষ্য ছিল একটাই– “চা মানে যেন একটা অভিজ্ঞতা হয়।” দোকানে মেলে হাতে বানানো চা, টোস্ট, ওমলেট ও কফি — খুব সাধারণ কিছু পদ, কিন্তু সেগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে গুণ ও যত্নের পরিপূর্ণতা। সময় যত এগিয়েছে, শহর যত পাল্টেছে, নেতাজি কেবিন ততই আপন রূপে অটুট থেকেছে।

মন্টু বাগচীর অবর্তমানে এখন দোকান সামলাচ্ছেন তাঁর পুত্র প্রণব বাগচী। বাবার দেখানো পথ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত না হয়ে তিনিও অনুসরণ করছেন সেই পুরনো রেসিপি, পুরনো রীতি। প্রণব বাবু বলেন, “বাবা যা তৈরি করে গিয়েছিলেন, যেভাবে শুরু করেছিলেন, আমি কিছুই পাল্টাতে চাই না। তাঁর কঠোর পরিশ্রমই আজ নেতাজি কেবিনকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। আমি শুধু সেটা বজায় রাখতে চাই।” এই দোকানের বিশেষত্ব একটাই– এখানে কিছুই চটকদার নয়, কিছুই বাহুল্যপূর্ণ নয়। তবুও, এখানে যেন সবই আছে। ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ে মিশে থাকে অতীতের গল্প, টোস্টের প্রতিটি কামড়ে থাকে মায়ের হাতে বানানো জলখাবারের স্বাদ।

কলকাতার বাসিন্দা সুবীর চৌধুরী, যিনি প্রায়শই অফিসের কাজে শিলিগুড়িতে আসেন, জানালেন, “শিলিগুড়ি এলেই আমি নেতাজি কেবিনে আসি। এখানকার চায়ের স্বাদ এমন যে মনে হয় আর কোথাও গিয়ে চা খাওয়ার দরকারই নেই। এটা শুধু চা নয়, এক অনুভব।” শুধু কলকাতা নয়, সিকিম, দার্জিলিং ও কোচবিহার থেকেও বহু মানুষ এসে ভিড় করেন এই কেবিনের সামনে। পুরনো কাঠের বেঞ্চে বসে অনেকে বলেন, "চা খাব তো নেতাজি কেবিন থেকেই খাব!"

এই কেবিনের জনপ্রিয়তার পেছনে শুধু খাবারের স্বাদ নয়, বরং আছে আন্তরিকতার ছোঁয়া। প্রণববাবু এটিকে শুধু ব্যবসা নয়, মনে করেন এক ধরণের সামাজিক দায়িত্ব। তিনি জানান, “আমি জানি, এত মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা সহজ নয়। তাই আমি চেষ্টা করি প্রতিটি কাপে সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে। এই মান বজায় রাখতে আমার সহকর্মীদের বড় অবদান আছে। এটা আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এইভাবেই আমি চলতে চাই।”

নেতাজি কেবিনে নেই চকমকে ইন্টেরিয়র, নেই ডিজিটাল ডিসপ্লে মেনু, নেই ক্যাফে সংস্কৃতির মোহ। তবুও এই দোকান ঘিরে তৈরি হয়েছে এক নিজস্ব জগৎ। যেখানে আধুনিকতা থেমে দাঁড়ায় এক কাপ চায়ের সামনে, যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে খাবারের মধ্য দিয়ে, যেখানে ব্যবসার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে আবেগ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন