Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫

৪৯ বছর পর ইতিহাস লিখলেন তরুণ ভারতীয় পেসার আকাশদীপ

 

Young-Indian-pacer-Akashdeep

সমকালীন প্রতিবেদন : এজবাস্টনে টেস্ট অভিষেকেই দুই ইনিংসে ৪ ও ৬ উইকেট নিয়ে আলো ছড়ালেন ২৮ বছরের বঙ্গপেসার। ম্যাচের শেষে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যখন বললেন, “এই ম্যাচটা আমি আমার ক্যান্সার আক্রান্ত দিদির জন্য খেলেছি,” তখন কেবল ড্রেসিংরুম নয়, গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আবেগে ভেসে যান।

১৯৯৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিহারের সাসারাম জেলার দেহরিতে জন্ম আকাশদীপের। বাবা রামজি সিং ছিলেন স্কুল শিক্ষক। কিন্তু ১৬ বছর বয়সেই তাঁকে দেখতে হয় জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়—বাবা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যু, মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে। সেই ধাক্কা ভেঙে দেয় গোটা পরিবারকে। মা লাড্ডু দেবী একা হাতে সামলান সংসার ও সন্তান। 

সেই সময় তিন বছর ধরে ব্যাট-বল ছুঁয়েও দেখেননি আকাশ। তবে ক্রিকেটকে কখনও ভুলতে পারেননি। বাবার মৃত্যু এবং পরে মায়ের উৎসাহে আবার ফিরে আসেন পিচে। ২০০৭ সালের ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় তাঁকে আত্মবিশ্বাস এনে দেয়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন নিজস্ব গতিতে।

বিহারে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর আকাশ চলে আসেন বাংলায়, স্বপ্নের পিছনে ছুটে। দুর্গাপুরে একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। প্রথমে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললেও, কোচ তাঁর গতি দেখে তাঁকে পেস বোলিংয়ে উৎসাহিত করেন। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পান এবং ২০১৯ সালে সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে তাঁর পেশাদার ক্রিকেট অভিষেক হয়। একই বছর বিজয় হাজারে ট্রফিতে লিস্ট-এ ও রঞ্জি ট্রফিতে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটেও আত্মপ্রকাশ।

এরপর ২০২১ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে নেট বোলার হিসেবে যোগ দেন। এক বছর পর, ২০২২ সালে ২০ লক্ষ টাকায় তাঁকে কেনা হয় আইপিএল-এ। কিন্তু ২০২৫ সালে ভারতীয় ক্রিকেটে চমক এনে দেয় লখনউ সুপার জায়ান্টস। ৮ কোটি টাকায় দলে নেয় তাঁকে—যা আকাশদীপের জীবন বদলে দেওয়ার মাইলফলক।

২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাঁচীতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক আকাশদীপের। কিন্তু যেটা শুধু আত্মপ্রকাশ ছিল, এজবাস্টনে এসে তা হয়ে ওঠে ইতিহাস। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে একাই ১০ উইকেট নেন। শুধু প্রতিপক্ষের উইকেটই নয়, জয় করেন কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তের হৃদয়।

জসপ্রীত বুমরার অনুপস্থিতিতে ভারতীয় বোলিং আক্রমণের ভার কাঁধে তুলে নিয়ে আকাশদীপ দেখিয়ে দিলেন—বিশ্বাস, অধ্যবসায় ও লড়াই থাকলে নতুন ইতিহাস গড়া সম্ভব। আকাশদীপের কাহিনি কেবল মাঠের নয়। এটি এক জীবনযুদ্ধে জিতে ওঠার গল্প। ভারতের এক প্রান্ত থেকে উঠে এসে বাংলার হাত ধরে, কঠিন পরিস্থিতিকে জয় করে উঠে আসা এক সাহসী তরুণের কাহিনি। ক্রিকেটজগতে এখন তাঁর নাম এক নতুন প্রতীকের মতো—সংগ্রাম, সংযম ও সাফল্যের প্রতীক।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন