সমকালীন প্রতিবেদন : গ্রামের কোনো বাড়িতে নেই দরজা। অফিস, স্কুল, দোকানপাটও খোলা ২৪ ঘন্টা। গোটা গ্রামকে পাহারা দেন শনিদেব নিজে। এখানে ব্যাংকেও ঝোলে না তালা। অথচ চোরেরাও চুরি করতে ভয় পায়। অদ্ভুত মনে হলেও এটাই ঘটে বাস্তবে। কিন্তু কেন শনিদেবের এত প্রিয় এই গ্রাম? এই গ্রাম জুড়ে রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। কিছু বিশেষত্ব। আর অপার ভক্তি। ভারতবর্ষের কোথায় রয়েছে এমন গ্রাম? ঠিকানা আর ইতিহাস, দুটোই থাকলো আজকের প্রতিবেদনে।
মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার একটা গ্রাম। শনি শিংনাপুর। গ্রামের কোন বাড়িতে নেই দরজা। কিন্তু তাতেও মানুষ থাকেন নিশ্চিন্তে। ঘুমোতে পারেন দরজা খোলা রেখেই, শুধুমাত্র বড় ঠাকুরের ভরসায়। শনিদেবের কৃপাতেই চুরি হয় না বলেও বিশ্বাস করে এখানকার মানুষ। যদিও এই বিশ্বাস আচমকাই হঠাৎ করে তৈরি হয়নি।
কয়েকশো বছর আগের কথা। কথিত আছে, গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটা নদীতে সেই সময় ভেসে উঠেছিল এক শিলা। যে শিলা লাঠি দিয়ে সরাতে গেলেই সেখান থেকে শুরু হয় রক্তপাত। একটা সময় রাত নামে। গোটা গ্রামের মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। সেদিন প্রধান সহ গ্রামের সব মানুষ একটাই স্বপ্ন দেখেছিলেন। ওই শিলা রূপে তিনিই এসেছেন। তিনি গোটা গ্রামকে রক্ষা করবেন বিপদ-আপদ থেকে। সেই থেকেই গ্রামের কোনো বাড়িতে নেই দরজা।
দু-একটা বাড়িতে হয়তো আড়ালের জন্য পর্দা ঝুলানো হয়। কিন্তু দরজা ভুলেও নয়। এলাকার মানুষ শনিদেবকে এতটাই মানেন যে শুধুমাত্র ঘর-বাড়ি নয়, অফিস, দোকান, স্কুল সহ শনি শিংনাপুর গ্রামের সব কিছুরই দরজার কপাট ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। এমনকি গ্রামের মানুষরা তাদের টাকা-পয়সাও উন্মুক্ত রেখেই চলে যায় নিশ্চিন্তে। তাদের বিশ্বাস, এসব সম্পদ দেখভাল করার দায়িত্ব স্বয়ং শনি দেবতার।
গ্রামটির পাবলিক টয়লেটের দরজাতেও কপাট নেই। তবে টয়লেটের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য চারকোনা আকৃতির একটি বিশেষ পাতলা কাঠের দরজা ব্যবহার করে থাকেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের আধুনিক ভবনগুলো নির্মাণের সময়েও দরজাবিহীন পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়। তাছাড়া ২০১১ সালে এই গ্রামে একটা ব্যাংকের শাখা খোলা হয়। সেখানে দরজা থাকলেও ঝোলানো হয় না তালা।
এটাই ভারতের প্রথম এবং এখনো একমাত্র লকলেস ব্যাংক নামেও পরিচিত। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, শনি দেবতার আশীর্বাদ এই গ্রামকে যখন থেকে রক্ষা করা শুরু করেছে, তার পর থেকেই শনি শিংনাপুর গ্রাম থেকে দারিদ্র্যও দূর হয়ে যায়। গ্রামের সকল মানুষের কাছে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ধন-সম্পদ। সেই সব ধন-সম্পদকে রক্ষার দায়িত্বে সেই বড় ঠাকুর, শনিদেব।
আসলে গ্রামবাসীর বিশ্বাস, কেউ যদি চুরি করতে আসে তবে সে শনি দেবতার অভিশাপে অন্ধ বা মারাত্মক ধরনের কোনো ক্ষতির মুখোমুখি হবে। আর সেই বিশ্বাস এবং ভরসাকে হাতিয়ার করেই বেঁচে আছে শনি শিংনাপুরের মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন