সমকালীন প্রতিবেদন : জলের দরে দিঘার জগন্নাথ মন্দির দর্শন? ট্রেন, বাস, প্রাইভেট কারে কত টাকা খরচ? সব থেকে সস্তায় কীভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন? কখন দিতে পারবেন পুজো? জগন্নাথ দেবের দর্শনই বা কখন করা যাবে? জানা দরকার কোন রুটে গেলে পাবেন স্পেশাল সুবিধা?
মহাধুমধাম এর সঙ্গে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পর থেকেই পুণ্যার্থীর ঢল উপচে পড়ছে। যারাই যাচ্ছেন তারা প্রত্যেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু যারা এখনো পর্যন্ত দীঘায় গিয়ে জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে পারেননি, তাঁরা কি করবেন? প্রথম জানুন বাসে করে যাওয়ার বিষয়টি।
বাসে দিঘা : কলকাতা থেকে দিঘায় বাসে চেপে যেতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। ধর্মতলা বাস ডিপো থেকে প্রতিদিনই দিঘাগামী বাস চলে। সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়। সরকারি এবং বেসরকারি দুই ধরনের বাসই যায় দিঘায়। ধর্মতলার পাশাপাশি গড়িয়া, দমদম, বিধাননগর, বারাসত, হাবড়া, খড়গপুর, দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর থেকেও দিঘাগামী বাস মেলে। সরকারি এসি বাসের ভাড়া ১৪৫-১৫০ টাকা। বেসরকারি এসি বাসের ভাড়া ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত। যাঁরা বাসে করে যাবেন তাঁদের নন্দকুমার-দিঘা ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে গিয়ে মন্দিরে যেতে হবে।
আর একটা বিষয় এখানে জানানো খুব জরুরী, আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে বাসে দিঘা গেট পর্যন্ত যাওয়া যাবে। বাইপাস ধরে নিউ দিঘার বাস ডিপোতে যেতে পারবেন। যাঁরা ওল্ড দিঘার ওপর দিয়ে যাবেন, তাঁদের দিঘা গেটের কাছে নামতে হবে। সেখান থেকে হেঁটে ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার গেলেই মন্দিরে পৌঁছনো যাবে। আর যাঁরা নিউ দিঘা বাস ডিপো থেকে যাবেন তাঁরাও ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে শনি মন্দিরের সামনে দিয়ে ২ কিমি হেঁটে সোজা মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন। কিন্তু যদি কেউ বাসে যেতে প্রেফার না করেন সেক্ষেত্রে অপশন হতে পারে ট্রেন।
ট্রেনে দিঘা : হাওড়া স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩টে ট্রেন চলে দিঘা পর্যন্ত। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস, সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে দুরন্ত এক্সপ্রেস এবং দুপুর ২টো ৪০ মিনিটে কাণ্ডারি এক্সপ্রেস। ফিরতি পথে এই ট্রেনগুলো দিঘা থেকে ছাড়ে যথাক্রমে সকাল ১০টা ২৫, দুপুর ১টা ৩৫ এবং সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে। হাওড়ার পাশাপাশি শালিমার স্টেশন থেকেও দিঘা পর্যন্ত ট্রেন চলে। এ ছাড়াও পুরী থেকে প্রতি বুধ ও শনিবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে একটা ট্রেন দিঘা যায়। মালদা টাউন থেকে স্পেশাল ট্রেন ছাড়ে প্রতি শনিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে।
বিশাখাপত্তনম থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে একটি ট্রেন দিঘায় যায়। কোচের উপর ভিত্তি করে ট্রেনের টিকিটের খরচ পড়তে পারে মাথাপিছু ১০৫ টাকা থেকে ৭৬০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে যে কোনও ট্রেনে চেপে দিঘা স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ১১৬বি জাতীয় সড়ক ধরে ওল্ড দিঘা অভিমুখে ৫০০ মিটার হেঁটে জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছনো যাবে। এছাড়াও, পাঁশকুড়া-দিঘা লাইনের ট্রেন ধরে দিঘা স্টেশনে নেমে সেখান থেকে হেঁটেও মন্দিরে পৌঁছনো যাবে।
কোথায় থাকবেন : শুধু জগন্নাথ মন্দির দর্শন নয়, দিঘায় আরো অনেক কিছু রয়েছে ঘুরে দেখার মতো। জগন্নাথ মন্দিরের কাছে পর্যটকরা ঘুরে দেখতে পারেন নিউ দিঘার অমরাবতী পার্ক। এছাড়াও রয়েছে মেরিন স্টেশন, অ্যাকোরিয়াম। জগন্নাথ মন্দির এবং গেটের আশপাশে ৫৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৫০০ টাকার একাধিক হোটেলও রয়েছে।
আর যদি কেউ যেতে চান প্রাইভেট কারে—
প্রাইভেট গাড়িতে দিঘা : হ্যাঁ, প্রাইভেট গাড়িতেও পৌঁছনো যাবে দিঘা জগন্নাথ মন্দির। ওল্ড দিঘার ওপর দিয়ে ও বাইপাস ধরে দু'দিক দিয়েই দিঘার জগন্নাথের মন্দিরে পৌঁছনো যাবে। বাইপাস দিয়ে গেলে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পাশে পরিবহণ দপ্তরের ডিপোর কাছে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে হেঁটে যেতে হবে মন্দিরে। পার্কিং এর বন্দোবস্তটাও জেনে রাখুন। প্রাইভেট গাড়ি পার্ক করা যাবে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের মাঠ এবং নিউ দিঘার হেলিপ্যাড ময়দানে। প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার এই পথ যেতে খরচ পড়তে পারে ৩৫০০ টাকার কাছাকাছি। সময় লাগতে পারে ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
পুজো দেওয়ার সময় : সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। এই সময়ের মধ্যে যে কেউ জগন্নাথদেবের দর্শন পাবেন। পুণ্যার্থীদের দাবি, মন্দিরের ভিতরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। তাই পুজো দিতে বেশি সময় লাগছে না। অতিরিক্ত পুণ্যার্থী সমাগমের কথা মাথায় রেখে মন্দির চত্বরের নিরাপত্তাও যথেষ্ট আঁটসাঁট। তাই বিপদের কোনও আশঙ্কা নেই বলেই দাবি ভক্তদের। মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, মন্দিরের গঠনশৈলী মন ছুঁয়ে গিয়েছে ভক্তদের। তাঁরা পুজো দিয়ে অত্যন্ত খুশি। সকলে গিয়েই মন্দিরের প্রশংসা করছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন