সমকালীন প্রতিবেদন : সুপ্রিম কোর্টের নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা (ডিএ) এখনও অধরাই। আজ, শুক্রবার অর্থাৎ ২৭ জুন ছিল সেই নির্ধারিত দিন, যেদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বকেয়া ডিএ-র অন্তত ২৫ শতাংশ পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ মানতে পারেনি রাজ্য সরকার। বরং আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তারা চেয়েছে আরও ছয় মাস সময়।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অর্থবর্ষের বাজেটে ডিএ বাবদ বকেয়া ২৫ শতাংশ অর্থ মেটানোর জন্য কোনও সংস্থান রাখা হয়নি। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে সরকার সেই অর্থ মেটাতে সম্পূর্ণভাবে অপারগ। ফলে নবান্ন আদালতের কাছে সময় চেয়েছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, ১৬ মে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর আদালত অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকারকে অন্তত বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ অর্থ ২৭ জুনের মধ্যে কর্মচারীদের হাতে তুলে দিতে হবে। এই নির্দেশকে কেন্দ্র করে জুন মাস জুড়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন প্রায় ১০ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগী। তাঁরা ভেবেছিলেন, রথযাত্রার দিনই হয়তো সরকারি কোষাগার থেকে কিছুটা স্বস্তির দম মিলবে। কিন্তু রথের চাকা গড়ালেও বকেয়া ডিএ-র প্রশ্নে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ভাগ্যে ফিরল না কোনও আশার আলো।
সরকারি কর্মী সংগঠনগুলোর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের বকেয়া ডিএ মেটাতে মোট ৪১,৭৭০ কোটি টাকা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তার ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার কোটির কিছু বেশি টাকা এখনই মেটানোর কথা ছিল। এদিকে জুন মাসেই রাজ্য সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ নিলামে রেখে প্রায় ৭,৫০০ কোটি টাকার ঋণ সংগ্রহ করেছে—যা মমতা ব্যানার্জী সরকারের একক মাসে নেওয়া সর্বোচ্চ ঋণ। এই বিপুল ঋণ নেওয়ার তথ্য সামনে আসায়, কর্মচারী মহলে একটা আশা তৈরি হয়েছিল যে হয়তো এবার অন্তত কিছুটা বকেয়া ডিএ মিটবে। কিন্তু সে আশাও মিলিয়ে গেল নিরাশায়।
সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির সময় বিচারপতিরা প্রথমে সম্পূর্ণ বকেয়া ডিএ মেটানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু রাজ্যের পক্ষ থেকে প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতকে জানান, এই মুহূর্তে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি এতটাই দুর্বল যে পুরো বকেয়া পরিশোধ করলে রাজ্যের "কোমর ভেঙে যাবে"। এই যুক্তির ভিত্তিতে আদালত পরে অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলে, আপাতত ২৫ শতাংশ বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে।
তবে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—যদি রাজ্য সরকার আরও ছয় মাস সময় পেয়েও অর্থের সংস্থান না করতে পারে এবং পুনরায় জানায় যে, তারা বকেয়া ডিএ দিতে অপারগ, তাহলে কি হবে? সুপ্রিম কোর্ট সেই পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, সেটাই এখন রাজ্য প্রশাসন থেকে শুরু করে কর্মী মহলের কাছেও কৌতূহলের বিষয়।
রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই এই প্রসঙ্গকে হাতিয়ার করে সরকারকে একহাত নিতে শুরু করেছে। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ ব্যয় করলেও, কর্মচারীদের ন্যায্য প্রাপ্য দিতে গড়িমসি করছে। এদিকে, আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে একাধিক সরকারি কর্মচারী সংগঠন। তাঁদের দাবি, এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও সরকার যদি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন ছাড়া আর পথ থাকবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন