সমকালীন প্রতিবেদন : মাহেন্দ্রক্ষণ ছিল দুপুর ৩টে থেকে ৩টে ১৫ মিনিট পর্যন্ত। আর সেই সময়ের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর হাত ধরে বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে দ্বারোদ্ঘাটন হয়ে গেল দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। এদিন সকাল থেকে শুরু হয় যজ্ঞ। সকালেই নির্ধারিত সময়ে বন্ধ দরজার ভিতরে বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবায়েত রাজেশ দ্বৈতাপতির নেতৃত্বে পুরোহিতেরা এই কাজ করেন। সঙ্গে ছিলেন ইসকনের কর্মকর্তা তথা দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য রাধারমণ দাস।
সকালে যজ্ঞের পর ভাত, ডাল মিষ্টি সহ ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয় প্রভু জগন্নাথকে। এদিন দ্বারোদ্ঘাটনের পরই পাঁচ মিনিটের জন্য মন্দিরের দরজা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। মন্দিরে ঢোকার আগে মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রীতির বার্তা দিলেন। তিনি জানালেন, রাজ্যবাসির বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে জগন্নাথদেবের প্রসাদ ও ছবি। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরকে এই দায়িত্ব দেন তিনি। গত ৩ বছর ধরে যারা মন্দির নির্মাণে কাজ করেছেন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মাহেন্দ্রক্ষণে মন্দিরের দ্বার উন্মোচন করে দরজা ঠেলে মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতেই ভিতরে একঝলক দেখা গেল জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহ। বিগ্রহের সামনে আরতিও করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দীঘার এই জগন্নাথ মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব গিয়েছে ইসকনের হাতে। প্রায় ২০ একর এলাকা জুড়ে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি করা হয়েছে।
এই মন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সোমবার থেকেই সৈকত শহরে পুর্ণ্যার্থীদের ভিড় জমে। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল হোম যজ্ঞ। রাজেশ দ্বৈতাপতির পাশাপাশি পুজোর আচার অনুষ্ঠানের জন্য পুরী থেকে দিঘায় এসেছেন আরও ৫৭ জন সেবক। এছাড়াও ইসকনের ১৭ জন সন্ন্যাসীর তত্ত্বাবধানে চলে যজ্ঞের কাজকর্ম। মন্দিরে জগন্নাথের প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে মোট এক কোটিবার নরসিংহ মন্ত্রোচ্চারণ করেন সেবকরা।
এদিন নিয়ম মেনে প্রথমে নিমকাঠের তৈরি জগন্নাথ মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ জগন্নাথের পাথরের বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করা হয়। একই সঙ্গে রাধাকৃষ্ণের পাথরের মূর্তিতেও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়। রীতি অনুযায়ী প্রথমে ভগবানকে সোনা, রুপো ও তামার তার দিয়ে বেঁধে সেই তারকে প্রধান পুরোহিতের কোমড়ে বাঁধা হয়। এরপর ঘট স্থাপন, কুণ্ড ও অবশেষে প্রতিবিম্ব তৈরি করা হয়। রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, পুরীর নিয়ম মেনেই প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথের স্নান এবং বস্ত্র পরিধানের প্রক্রিয়া সারা হয়। জগন্নাথের উদ্দেশে নিবেদন করা হয় ৫৬ রকমের ভোগ।
মমতা ব্যানার্জী বলেন, ‘আমি মনে করি, এই মন্দির আগামী হাজার হাজার বছর ধরে তীর্থস্থান এবং পর্যটনস্থল হিসাবে উন্মাদনার প্লাবন তৈরি করবে। এই মন্দির সকলের জন্য। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, সবারে করি আহ্বান। সমস্ত ধর্ম বর্ণের মানুষ এসেছেন এখানে। প্রত্যেকেই আমাদের অতিথি। ধর্ম কখনও মুখে প্রচার করে হয় না। ধর্মে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার জিনিস। মন্দির চত্বরকে কেন্দ্র করে ৫০০ গাছ লাগানো হয়েছে। আগামীদিন সবার বাড়িতে ছবি ও প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’
গতকালই মহাযজ্ঞ হয়েছে দিঘার মন্দিরে। পূর্ণাহুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। কলিঙ্গ শৈলীতে তৈরি জগন্নাথ দেবের মন্দিরটি পুরীর মন্দিরের আদলেই তৈরি হয়েছে। গত ক’দিন ধরে হয়েছে সম্পূর্ণ শাস্ত্রীয় রীতি মেনে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান। কলসযাত্রার পর মঙ্গলবার মহাযজ্ঞ করা হয়। আর বুধবার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনের শুভক্ষণে দিঘায় চাঁদের হাট। ছিলেন প্রসেনজিৎ, দেব, জুন মালিয়া, রচনা ব্যানার্জী, সায়ন্তিকা, লাভলি মৈত্র, জিৎ, রূপঙ্কর, শ্রীকান্ত মোহতা, অরিন্দম শীল, নৃত্যশিল্পী ডোনা প্রমুখ। অনুষ্ঠান পর্ব শেষ করে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন