সমকালীন প্রতিবেদন : দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও সীমান্ত উত্তেজনার কারণে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটীয় সম্পর্ক কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১২ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়নি। শুধুমাত্র আইসিসি ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল আয়োজিত টুর্নামেন্টেই সীমাবদ্ধ থেকেছে এই উত্তেজক দ্বৈরথ। তবে চলতি বছরে সেই স্থবির পরিস্থিতির বরফ গলতে পারে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে সর্বভারতীয় এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটের রিপোর্ট।
সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক আলাপ-আলোচনায় ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের ক্রিকেট বোর্ডই প্রাথমিকভাবে সম্মতি জানিয়েছে আসন্ন এশিয়া কাপে অংশগ্রহণের বিষয়ে। যদিও এখনো কোনও পক্ষ চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়নি, তবে আভাস মিলছে যে আলোচনার সুর অনেকটাই ইতিবাচক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পহেলগাওয়ে জঙ্গি হামলা ও সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং তার সরাসরি প্রভাব পড়ে এশিয়া কাপের আয়োজনেও। আগে ভারতকে আয়োজক দেশ হিসেবে নির্ধারণ করা হলেও, পরে সেই ভেন্যু বদলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়। আইসিসি ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল-এর উদ্যোগে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এই আয়োজন হতে চলেছে বলেই ধারনা করা হচ্ছে।
এই টুর্নামেন্ট নিয়ে বিসিসিআই বা পিসিবি সরাসরি কিছু না বললেও, কেউই এখনও ‘বয়কট’-এর রাস্তা নেয়নি। যা প্রকারান্তরে দুই দেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তোলে। বিসিসিআইয়ের এক সূত্র জানায়, টুর্নামেন্টের প্রোমোশনাল ভিডিও ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে ভারতের শুভমান গিল, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ও শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা অংশ নিয়েছেন।
অন্যদিকে, আগস্ট মাসে বাংলাদেশের মাটিতে রোহিত শর্মাদের তিনটি ওয়ান ডে ও তিনটি টি-২০ ম্যাচ খেলার কথা থাকলেও, সেই সফরও এখন প্রশ্নের মুখে। পহেলগাওয়ে জঙ্গি নাশকতার জেরে শুধু পাকিস্তান নয়, ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কও চাপের মুখে পড়েছে। বিসিসিআই-এর এক আধিকারিক স্বীকার করেছেন, "সফরটি এখনও আমাদের ক্যালেন্ডারে আছে, তবে সাম্প্রতিক প্রেক্ষিতে সফর বাতিল হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।"
দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক কেবল মাঠে সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে বিপুল আর্থিক স্বার্থ। ভারতীয় দর্শক, বিজ্ঞাপনদাতা ও সম্প্রচার সংস্থার উপর নির্ভরশীল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড যদি ভারতীয় বাজার হারায়, তবে তা তাদের জন্য ভয়ঙ্কর আর্থিক বিপর্যয়ের কারণ হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি বয়কটের রাস্তা নেয়, তাহলে পিসিবি ও তাদের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের জন্য অর্থনৈতিক সংকট অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক কূটনৈতিক স্তরে নানা জটিলতায় জর্জরিত হলেও, সাম্প্রতিক আলোচনায় আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল যদি আনুষ্ঠানিক সূচি প্রকাশ করে এবং তাতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ইঙ্গিত মেলে, তাহলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আবার মাঠে ফিরতে পারে উপমহাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেট দ্বৈরথ—যার দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্বের ক্রীড়ামঞ্চ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন