সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে পয়লা বৈশাখের আগের দিন বা চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় চড়কের পুজো। এটি মূলত গ্রামাঞ্চলের বাঙালিদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। চৈত্র সংক্রান্তি থেকে শুরু হয়ে নববর্ষের প্রথম দু-তিন দিন ধরে চড়ক পুজোর উৎসব চলে।
এই চড়কের ইতিহাস নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত আছে। তবে এই পুজোর পৌরাণিক ইতিহাস সেভাবে কিছু নেই। কারণ, কোনো পুরাণেই চৈত্র মাসে মহাদেবের পুজো ও সেই উপলক্ষ্যে উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পুজোর কথা বলা নেই। তাহলে কিভাবে শুরু হয় এই গাজন উৎসবের?
ইতিহাসের তথ্য বলছে, প্রাচীনকালে পাশুপত সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই উৎসব পালন করতেন। মূলত নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষেরাই বেশি পালন করেন এই পুজো। প্রচলিত কাহিনি অনুসারে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা প্রথম চড়ক পুজোর প্রচলন করেছিলেন। চড়ক পুজো উপলক্ষ্যে গাজনের মেলা বসে এই সময়।
কিন্তু এই চড়ক পুজো কি? গ্রাম বাংলার বিভিন্ন শিবের মন্দিরে একটি লম্বা কাঠকে চড়ক গাছ হিসেবে পুজো করা হয়। এই চড়কগাছে একজন ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তবে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এই নিয়ম বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের মধ্যে কোথাও কোথাও এখনো তা প্রচলিত আছে। আবার অনেকেই মনে করেন যে, চড়কের দিনে নীল চণ্ডিকার সঙ্গে নীলকণ্ঠ অর্থাত্ শিবের বিয়ে হয়েছিল। সেই কারণে শিব–পার্বতীর বিয়ের উত্সব হিসেবেও চড়ককে পালন করেন অনেকে।
এই পুজোর আর এক নাম গম্ভীরাপুজো বা শিবের গাজন। আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা বুড়োশিব নামে পরিচিত।
সেখানে চড়ক গাছ থাকে। গ্রামের দিকে অনেক জায়গায় সেই জায়গাটিকে বুড়ো শিবতলাও বলা হয়ে থাকে। কোনও পতিত ব্রাহ্মণ এই পুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। আর এভাবেই চড়ক উৎসব রয়ে গেছে বাংলার অলিন্দ ও নিলয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন