সম্পদ দে : প্রতিবছর বর্ষাতেই স্ক্রাব টাইফাস এর সংক্রমণের ঘটনা দেখা যায়। এই বছরও তার আলাদা কিছু হয়নি। তবে এই বছর স্ক্রাব টাইফাস এর সংক্রমনের ঘটনা যেন অন্যান্যবারের থেকে অনেক বেশি বাড়ছে। যার কারণে সতর্ক থাকতে বলছেন ডাক্তারেরা। এক্ষেত্রে সবথেকে বড় সমস্যার বিষয় হলো, বর্তমানে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মত কারণেও জ্বরের সংখ্যা বাড়ছে, আর এদের সাথে স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণগুলির খুব একটা অমিল নেই।
অনেক ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র একটি সাধারণ পোকার কামড় ভেবে বহু মানুষ ঠিকভাবে এর চিকিৎসা করান না। তবে চিকিৎসকদের মতে, স্ক্রাব টাইফাসের প্রভাব বিনা চিকিৎসায় এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে যে, প্রাণহানির সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
জ্বর ধরা পড়লে চিকিৎসকেরা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ অসংখ্য রোগী বর্তমানে স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের ডাঃ জয়দেব রায়ের মতে, অন্যান্য জ্বরের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকার কারণে স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণগুলি বোঝা কঠিন হতে পারে।
এই রোগের লক্ষণগুলি কি কি ?
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলির সঙ্গে এর যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। এক্ষেত্রেও জ্বর, ত্বকে ফুসকুড়ি, অঙ্গে ব্যথা হয়।
তবে একে আলাদা করে চেনার জন্য যে লক্ষণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেটি হল, যেখানে এই পতঙ্গ কামড়ায় সেখানে তৈরি হয় একটি কালো দাগ, যাকে 'এসচার' বলা হয়। এমনকি স্ক্রাব টাইফাসের কারণে শরীরের লিম্ফ গ্লান্ডগুলিও ফুলতে শুরু করে, যা সাধারণ জ্বর বা ডেঙ্গুর কারণে হয় না।
স্ক্রাব টাইফাস হলো এমন একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা বহু অর্গান ফেইলিওর এবং সম্ভাব্য মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে। একে রোধ করতে গেলে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। এই রোগবাহক পতঙ্গগুলি প্রায়শই ঝোপঝাড় এলাকায় পাওয়া যায়।
একসময় এই সংক্রমণগুলি বেশিরভাগ গ্রামের দিকে হলেও এখন শহরের দিকেও এর প্রভাব যথেষ্ট ছড়িয়ে পড়েছে। বড়দের থেকেও শিশুরা এই রোগের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি এই রোগটি বাড়ির পোষা প্রাণীর মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। ফলে সংক্রমণ রোধ করার জন্য পোষা প্রাণীদের সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করাও অত্যন্ত প্রয়োজন।
: ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন :
৫ থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য পেনিসিলিন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন এবং ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য ডক্সিসাইক্লিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায়। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না হলে কিডনি এবং লিভার ফেইলিওরের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—
বাচ্চাদের ফুল-হাতা পোশাক পরা, মাঠে খালি পায়ে যাওয়া এড়িয়ে চলা, কোনওরকম পোকামাকড় কামড়েছে কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা, বাড়ির বড়দের মধ্যে সতর্কতা বজায় রাখা এবং কোনওপ্রকার লক্ষণ ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা।
মোটকথা, বর্ষা ঋতুতে স্ক্রাব টাইফাসের ক্রমবর্ধমান প্রকোপের কারণে এখন উচ্চতর সচেতনতা এবং সতর্কতা রাখা এবং লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের দ্বারা জানানো সতর্কতাগুলি মেনে চলা এবং সময়মত চিকিৎসার মাধ্যমে প্রত্যেকেই কার্যকরভাবে নিজেদের এবং তাদের প্রিয়জনকে স্ক্রাব টাইফাসের সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন