দেবাশীষ গোস্বামী
গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হলো চন্দ্র অভিযান। প্রথমে ১৪ জুলাই ভারতের চন্দ্রযান ৩ উৎক্ষেপণ হল। তারপরে হঠাৎ ১১ আগস্ট আবার রাশিয়া তার চন্দ্রযান লুনা–২৫ চাঁদের উদ্দেশ্য উৎক্ষেপন করল। তারপরই হঠাৎ রাশিয়া চন্দ্রযান লুনা–২৫ মুখ থুবড়ে পড়ল।
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু যখন থেকে রাশিয়া এই চন্দ্রযান পাঠিয়েছে, তখন থেকেই ভারতীয়দের মনে একটা প্রশ্ন উঠেছে। সেটা হল, রাশিয়া কি ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য বা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম অবতরণ করার জন্য তড়িঘড়ি এই কাজ করলো?
এই সবের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে, যেকোন দেশই চন্দ্র অভিযানের পরিকল্পনা করুক না কেন সেটা কখনোই দু এক মাস বা দুই এক বছরের মধ্যে সম্ভব নয়। রাশিয়া কিন্তু অনেক দিন আগেই চন্দ্র অভিযান সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছে।
যে তিনটি দেশ এখনো চন্দ্র অভিযান সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছে তার মধ্যে রাশিয়াও আছে। এছাড়া, অন্য দেশ দুটি হলো আমেরিকা ও চীন। এটা ঠিক কথা, এর আগে রাশিয়া যখন চন্দ্র অভিযান চালিয়েছিল, তখন কিন্তু বৃহত্তর সোভিয়েত রাশিয়া ছিল। এখন বিভাজনের পর যেটা শুধু রাশিয়া হয়েছে।
যতদূর জানা যাচ্ছে, রাশিয়া এই দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্র অভিযান চালানোর জন্য ২০১০ সালে প্রথম পরিকল্পনা করে এবং তাদের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ROSCOSMOS সরকারের কাছ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট দাবি করে। কিন্তু রাশিয়া সরকার তাদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও এই খাতে পুরো টাকাটাই বরাদ্দ করেছিল।
তুলনায় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো ২০১৬ সালে প্রথম চন্দ্রযান ২ কে চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা করে, যেটা ২০১৯ সালে ব্যর্থ হয়। তার পরবর্তী সময়ে এই চন্দ্রযান ৩ চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা হয় এবং যেটি বুধবার সন্ধ্যা ছটা চার মিনিটে চাঁদে অবতরণ করতে পারে।
সুতরাং ভারত এবং রাশিয়া প্রতিযোগিতা করে চন্দ্রযান অভিযান চালিয়েছে, এ কথা ঠিক নয়। দ্বিতীয়ত, দুই দেশ দুই ধরনের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নিজেদের চন্দ্রযান চাঁদে পাঠিয়েছে। তবে এখন যে প্রশ্নটা বেশি ঘোরাফেরা করছে সেটা হল, রাশিয়া কি শেষ মুহূর্তে একটু তাড়াহুড়া করেছে এবারের এই চন্দ্রযান অভিযানে?
একটু ভেবে দেখলে এই কথাটা একদম অস্বীকার করা যায় না। কারণ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এখন ঘরে বাইরে নানারকম চাপের সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে। সেইজন্য এটা হলেও হতে পারে রাশিয়াবাসী ও অন্যান্য পশ্চিম দেশগুলির নজর ঘোরানোর জন্য তড়িঘড়ি এই মহাকাশ অভিযান।
দুটি দেশই চাঁদের দুর্গম দক্ষিণ মেরু অভিযান চালালেও যদি একটু চিন্তা করে দেখা যায় তাহলেই বোঝা যাবে এটি একটি অসম প্রতিযোগিতা। যতদূর জানা যাচ্ছে, ভারতের এই চন্দ্র অভিযানে যেখানে মোট ৬১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, সেখানে রাশিয়ার খরচ হয়েছে ১৬০০০ কোটি টাকারও বেশি।
লুনা ২৫ এর ক্ষেত্রে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সয়ুজ ২ রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতের চন্দ্রযান ৩ এর ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম শক্তিধর LVM3 রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। রাশিয়ার চন্দ্রযান লুনা ২৫ চাঁদে পৌঁছানোর সময় ধার্য ছিল ১২ দিন এবং তার আয়ু ছিল এক বছর।
কিন্তু ভারতীয় চন্দ্রযান ৩ এর চাঁদে অবতরণের সময় নির্ধারিত আছে ৪২ দিন এবং তার আয়ু মাত্র ১৪ দিন। সুতরাং, উপরের তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে ভারত এবং রাশিয়ার পরিকল্পিত চন্দ্র অভিযানে কোনো দিক দিয়ে প্রতিযোগিতা সম্ভব নয়।
এই দুই দেশের চন্দ্র অভিযানের মাঝে আবার খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, এশিয়ার আরো একটি দেশ চন্দ্র অভিযানে পরিকল্পনা করেছেন। জাপান আগামী ২৬ আগস্ট চন্দ্র অভিযানের পরিকল্পনা করেছে।
জাপানের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র JAXA জানিয়েছে যে, এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে XRISM MISSION এবং মহাকাশযানটির নাম দেওয়া হয়েছে SLIM। যদিও এই চন্দ্রযানটির অবতরণের সময় ও স্থান সম্বন্ধে কিছু জানা যায়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন