Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩

গাছেরাও সংকেত পাঠায় বিপদের

 

Trees-also-send-signals-of-danger

স‌ম্পদ দে : বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রথমবার পৃথিবীকে তথ্যটা না দিলে, কেউ হয়তো আজও জানতেই পারত না যে গাছেদেরও প্রাণ আছে। জগদীশচন্দ্র বসুই ১৯০১ সালে প্রথমবার 'রয়েল সোসাইটি অফ লন্ডন'-এ প্রদর্শনের মাধ্যমে দেখান যে, মানুষের মতো গাছেদেরও প্রাণ এবং অনুভূতি আছে। তবে বিষয়টি হল, প্রাণ থাকা সত্ত্বেও তারা এক জায়গায় স্থির। না তারা কথা বলতে পারে, না মনের ভাব প্রকাশ করতে। তবে পৃথিবীতে এমনও এক প্রজাতির গাছ আছে, যে কিনা বিপদের গন্ধ পেলেই বাকি সমস্ত গাছকেও সতর্ক করে দেয়।

শুনতে অবাক লাগতে পারে। তবে, আফ্রিকা এমন একটি মহাদেশ, যেখানে কিনা এমন অজস্র গাছ পাওয়া যায়, যার রহস্য এখনও পর্যন্ত মানুষ বুঝে উঠতে পারেনি। সঠিক ধরেছেন, আজকে যে গাছটিকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই গাছটিও আফ্রিকাতেই পাওয়া যায়। গাছটির নাম আকাশিয়া। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী এবং উদ্ভিদ জগত বিভিন্ন রহস্যে ভরা। আর সেখান থেকে পিছপা হয় না এই আকাশিয়া গাছ। এদের বৈশিষ্ট্য হলো, কোনও বিপদ সংকেত পেলেই এই উদ্ভিদেরা আশপাশকার বাকি সমস্ত গাছেদেরকে তার জানান দিয়ে দেয়। 

যেকোনও জীবজন্তুদের ক্ষেত্রে বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা কিংবা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা তুলনামূলক বেশ সোজা। আমরা মানুষেরা তো কথা বলে কিংবা লিখে বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মনেরভাব প্রকাশ করতে পারি। তবে বাকি জীবজন্তুরাও ছোটাছুটি বা চিৎকারের মাধ্যমে একে অপরকে সতর্ক করার পথ খুঁজে নেয়। তবে গাছেদের ক্ষেত্রে তো এমনটা করা সম্ভব নয়। তাদের প্রাণ থাকলেও তারা একপ্রকার জড় বস্তুর মতোই এক স্থানে পড়ে থাকে। 

তাহলে এই আকাশিয়া গাছ কিভাবে একে অপরকে বিপদ আসলে সতর্ক করে? আকাশিয়া গাছেদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের রহস্য জানার আগে জেনে নেওয়া যাক, কোথায় এই গাছ পাওয়া যায়। মূলত আফ্রিকার সাভানা অরণ্যে এই আকাশিয়া গাছ রয়েছে ভরপুর পরিমাণে। গোটা আফ্রিকাতেই এই গাছ যথেষ্ট নজরে পড়ে, তবে মূলত সাভানা এলাকাতেই সব থেকে বেশি এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। 

আকাশিয়া গাছ মূলত যে কোনও ধরনের মাটিতে এবং যেকোনও রকমের পরিবেশে বড় হতে পারে। এর মূল মাটিতে অনেক গভীর পর্যন্ত গিয়ে জল শোষণ করে। ফলে এর আলাদা করে সেইরকম জল না হলেও চলে। তাই আফ্রিকার মতো মহাদেশ যেখানে প্রচুর জায়গায় বৃষ্টির খামতি, সেইরকম জায়গাতেও আকাশিয়া গাছ দেখতে পাওয়া যায় খুব সহজেই।

এবার আসা যাক এই গাছগুলির একে অপরকে আসন্ন বিপদ থেকে সতর্ক করার রহস্যে। মূলত আকাশিয়া গাছগুলি নিজেদেরকে বিভিন্ন তৃণভোজী পশুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একে অপরকে সতর্ক করার এই উপায় বার করেছে। যখন হরিণ, জিরাফ বা জেব্রার মতো কোনও প্রাণী আকাশিয়া গাছের পাতা খাওয়া শুরু করলে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই গাছ ট্যানিন নামক এক পদার্থের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। 

ট্যানিন হল একপ্রকার বিষাক্ত পদার্থ, যা কিনা পাতার স্বাদ এতটাই বিশ্রী করে দেয় যে, তৃণভোজী প্রাণীরা এর পাতার স্বাদের কারণে এর থেকে দূরে চলে যায়। তবে স্বার্থপরের মতো কেবলমাত্র নিজেকেই বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে না এই গাছ। বরং অন্যান্য গাছদেরকেও সতর্ক করে দেয় আকাশিয়া। 

নিজের ওপর বিপদের সংকেত পেলেই আকাশিয়া গাছটি ইথিলিন নামক একটি গ্যাস দ্রুত বাতাসে ছাড়া শুরু করে দেয়। এই গ্যাস বাতাসের সঙ্গে মিশে দ্রুত আশপাশকার বাকি সমস্ত আকাশিয়া গাছেদেরকেও আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দেয়। আর এরপরেই বাকি সমস্ত আকাশিয়া গাছেরাও নিজেদের পাতায় ট্যানিনের উৎপাদন বাড়াতে শুরু করে দেয়। 

আর এভাবেই দলবদ্ধভাবে কাজ করে তারা নিজেদেরকে তৃণভোজী প্রাণীদের আক্রমণের মুখ থেকে বাঁচিয়ে নেয়। কেবলমাত্র আকাশিয়াই নয়, বিভিন্ন মরুভূমি এলাকাতেও এমন কিছু কাঁটা গাছ দেখা যায়, যারা কিনা বিপদের সংকেত পেলেই তাদের গায়ে থাকা কাঁটা এতটাই শক্ত করে ফেলে যে, আক্রমণকারী সেই প্রাণী কাঁটার খোঁচা খেয়ে তার আশেপাশে আসারও চেষ্টা করে না।

এইরকম বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং আকাশিয়ার মতো গাছ আছে, যারা কিনা বিপদের সময় পরস্পরকে বাঁচার জন্য সাহায্য করে। বর্তমানের এই আত্মকেন্দ্রিক এবং স্বার্থপর জীবনেও কিছু উদ্ভিদেরাও শিখিয়ে যায়, কিভাবে বিপদের সময় একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে লড়তে হয়।







‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন