সম্পদ দে : সম্প্রতি 'গাঁড়াপোতা শপ্তক'–এর ২৪ বর্ষ নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বনগাঁর গাঁড়াপোতা এলাকার বর্ণপরিচয় অডিটোরিয়ামে। এবারের নাট্যমেলার মূল ভাবনা ছিল 'সবুজের অভিযান'। একঝাঁক সবুজ মিলে সম্পন্ন করল এই তিন দিনের উৎসব।এবারের নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করেন মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেতা উজান চট্টোপাধ্যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হয় অডিটোরিয়াম সংলগ্ন মুক্ত চত্বরে।
১৯৯৬ সালে 'কচি সংসদ' নামে বনগাঁর গাঁড়াপোতা এলাকার এই নাট্যদলের সূচনা হয়। তারপর যত দিন যায় ততই ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে নাট্যদলের। বর্তমানে দলের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে 'গাঁড়াপোতা শপ্তক'। বিশেষত খুদেদের ও তরুণদেরকে নিয়েই নাট্যচর্চা করা হয়ে থাকে এই দলে।
পায়ে পায়ে কখন যে ২৪ বছর পেরিয়ে গেছে এই নাট্যদলের, তা তারা খেয়াল করে উঠতে পারেননি। এই নাট্যোৎসবে বিভিন্ন নাট্যদলের সঙ্গে সঙ্গে থিয়েটার কর্মী ও গুণী মানুষদেরকেও বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত করা হয়। নাট্যমেলার প্রথম দিনের প্রযোজনা, 'বেলঘড়িয়া অভিমুখ'-এর 'কোজাগরী' নাটকটি বর্তমান সময়ের এক সাহসী প্রযোজনা। অভিনয়, মঞ্চ ভাবনা, আলো, আবহ– সবকিছু মিলিয়ে এক অনন্য উপস্থাপন এটি।
এদিনেরই দ্বিতীয় নাটক 'শান্তিপুর সাংস্কৃতিক'– এর 'রক্ত উপখ্যান'। অসাধারণ শারীরিক নৈপুণ্যতায় অতীতের রক্তাক্ত কাহিনী দশর্ককে বাকরুদ্ধ করে দেয়। কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী ও নির্দেশনায় এই দুটি নাটকে দর্শকের উপস্থিতি এবং তাদের নিমগ্নতা গাঁড়াপোতা শপ্তকের ধারাবাহিক নাট্যচর্চার সফলতাকেই তুলে ধরে।
নাট্যমেলার দ্বিতীয় দিনটি 'বনগাঁ ধুলাউড়ানিয়া'- এর প্রযোজনা 'এ জার্নি অব স্পার্টাকাস' নাটকটি দিয়ে শুরু হয়। মূল নাটক বাদল সরকার। নির্দেশনা লোপামুদ্রা গুহনিয়োগী। এদিনের দ্বিতীর নাটক ছিল পাটনার ডিভাইন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের 'আও তানিক প্রেম করে'। পরিকল্পনা ও নির্দেশনা স্বরম উপাধ্যায়।
দ্বিতীয় দিনের শেষ নাটক গাঁড়াপোতা শপ্তকের প্রযোজনা, 'কমফর্ট জোন অথবা মরে গেলি অরুণেশ?'। নাটক স্বপনরঞ্জন হালদার, নির্দেশনা প্রণয় বিশ্বাস ও রুমা চ্যাটার্জী।
তৃতীয় তথা শেষ দিনের প্রথম নাটক ছিল 'গড়িয়া সুচর্চা'র প্রযোজনা 'অনার্যায়ন'। রচনা ও নির্দেশনা নন্দন ভট্টাচার্য। এদিনের দ্বিতীয় নাটক 'দক্ষিণেশ্বর সংকেত'- এর প্রযোজনা 'রুপাই সাজু কথা'। রচনা পল্লীকবি জসীমউদ্দীন, সম্পাদনা ও নির্দেশনা প্রিয়াঙ্কা রায়।
নাট্যমেলার শেষ নাটক গাঁড়াপোতা শপ্তকের বড়োদের জন্য ছোটোদের নাটক 'কালের যাত্রা'। রচনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নির্দেশনা প্রণয় বিশ্বাস ও রুমা চ্যাটার্জী।
তিনদিন ব্যাপী নাট্যমেলার প্রথম দুদিন আন্তঃ বিদ্যালয় নাট্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মোট পাঁচটি বিদ্যালয় এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগী দলগুলির প্রযোজনাও দর্শকদের মুগ্ধ করে। বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নাটক নিয়ে এই উদ্দীপনা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।
আন্তঃ বিদ্যালয় নাট্য প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান দখল করে যথাক্রমে, বনগ্ৰাম উচ্চ বিদ্যালয়, কালুপুর পাঁচপোতা উচ্চবিদ্যালয় ও চাঁদপাড়া বানী বিদ্যাবীথি। মুক্তচত্বরেই বিজয়ী বিদ্যালয়গুলিকে ও ছাত্রছাত্রীদেরকে পুরষ্কৃত করা হয়।
গাঁড়াপোতা শপ্তকের সদস্যদের দাবি, ২৪টা বছর অনেক বড় হলেও তাঁদের কাছে সংখ্যাটি নগণ্য মাত্র। কেবল ২৪ বা ২৫ বছরেই থামতে চান না তাঁরা। ভবিষ্যতেও যতদিন পারবেন, এভাবেই নাট্য উৎসব করতে থাকবেন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের ভেতরেও থিয়েটার ও নাটকের প্রতি আগ্রহ জাগাতে থাকবেন তাঁরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন