সমকালীন প্রতিবেদন : উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর কলেজপাড়ার সেই ছেলেটা! আজ থেকে ১৪ বছর আগে টিভির পর্দায় যাঁর গানে বুঁদ হয়েছিল তামাম দর্শককুল। যাঁকে ঘিরে গর্বে মেতে উঠেছিল এই সীমান্ত শহর। হ্যাঁ, তিনি বিশাখজ্যোতি মজুমদার। জি বাংলা সারেগামাপায় যিনি সুরের মূর্চ্ছনায় মাত করে দিয়েছিলেন রিয়েলিটির শো–র দর্শকদের। অঢেল প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন বিচারকদেরও। টানটান লড়াইয়ে সেই সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় তিনি তৃতীয় হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু মন জিতে নিয়েছিলেন দর্শকদের। বনগাঁর মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসায় ভেসে গিয়েছিলেন সেদিন।
তার পর ইছামতি দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। নিজের স্বপ্ন পূরণে বাড়ি ছেড়ে এখন কয়েক হাজার কিমি দূরে থাকেন বিশাখ। মুম্বইয়ের কান্দিভালি ইস্টের ঠাকুর ভিলেজের বাসিন্দা। ওই ঠিকানা থেকেই প্রতিদিন সকালে নতুন করে লড়াই শুরু হয় তাঁর। শুধু গায়ক নয়, বলিউডে নিজেকে সুরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই। টানা দশ বছর দাঁতে দাঁত চেপে সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যখন যেমন সুযোগ আসছে, নিজেকে তেমনভাবেই উজাড় করে দিচ্ছেন। তবে মুম্বইয়ে একাকী দিনযাপনের মাঝে শিকড়ের টান ভোলেননি আজও। বনগাঁকে ভীষণ মিস করেন। টেলিফোনে কথা বলতে বলতে নিজের শহরের খোঁজ বারবার নিচ্ছিলেন। বললেন, 'শিকড়ের টান আছে বলেই আমার মিউজিক আছে। ওটা কোনওদিনই ভুলতে পারব না।'
কথায় কথায় একটা দারুণ খবরও দিলেন। এবার দুর্গাপুজোর আগেই বিশাখের রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ পেতে চলেছে। ছ'টি গান থাকছে তাতে। বললেন, 'রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে বা শুনতে তো খুবই ভাললাগে। আর সেই ভাললাগা থেকেই এই অ্যালবাম। তবে সত্যি বলতে কী, রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কোনওরকম পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার সাহস পাইনি।' এটাও জানালেন, 'ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে ফিউশন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে।' ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়েও কাজ করতে চান তিনি। তাছাড়া, দেশ–বিদেশের নানা ধরনের লোকগান নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। নিজের লড়াই আর যোগ্যতা দু'টোর উপরেই ভরসা রাখতে চান বিশাখ। বললেন, 'মুম্বইয়ে কাজের সুযোগ আছে। যোগ্যতা থাকলে নিশ্চয়ই একদিন না একদিন নিজেকে মেলে ধরতে পারবো, সেই বিশ্বাস আছে।'
বাংলাতেও কাজ করতে চান। তবে এখানে কাজের সুযোগ খুব কম বলে মনে করেন তিনি। বললেন, 'বাংলায় অনেক মেধা আছে। কিন্তু এখানে ইন্ডাস্ট্রি খুব ছোট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সবাই নিজের মেধাকে বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছেন না।' ২০০৭ সালে জি বাংলায় সারেগামাপা দিয়ে যাঁর পথ চলা শুরু হয়েছিল, ২০২১ সালে এসে কতটা পথ পাড়ি দিলেন বিশাখ ? প্রশ্নের উত্তরে শিল্পীর লাজুক উত্তর, 'কই কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু একা থাকতে থাকতে রান্না করতে শিখেছি।' তবে এটা ঠিক, স্বপ্নের সফরে বিশাখ অনেকটাই করে দেখিয়েছেন ইতিমধ্যে।
২০১০ সালে জিটিভি ন্যাশনালের সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হওয়ার পরের বছরই মুম্বইয়ে পাড়ি দেন বিশাখ। সেই বছরই অর্থাৎ ২০১১ সালে সাজিদ– ওয়াজিদের সুরে 'নো প্রবলেম' সিনেমায় তিনি টাইটেল ট্র্যাক গান। ২০১৪ তে মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ফিচার ফিল্ম 'বাবলু হ্যাপি হ্যায়' ছবিতে কাজ করেন বিশাখ। বললেন, এর পর আরও পাঁচ-ছ'টা সিনেমায় সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন। তাঁর সুর করা গানে বিভিন্ন ছবিতে গেয়েছেন মিকা সিং, শঙ্কর মহাদেবন, সোনু নিগম, অমিত কুমার, মহালক্ষ্মী আইয়ার, জাভেদ আলি। কাজ করেছেন বেশকিছু বিজ্ঞাপনী ছবিতেও। গত বছর অ্যামাজন প্রাইমের জন্য 'গনকেশ' নামে একটি ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন।
বিশাখের কথায়, 'প্রফেশনাল দিক থেকে বলতে গেলে সারাক্ষণ কাজের জন্য দৌড়তে হয়। মুম্বইয়ে কোনও গডফাদার নেই আমার। ফলে যেটুকু করেছি, নিজের মেধা, জেদ আর ইচ্ছেশক্তির জোরে। পরিবার আমার পাশে আছে। আর আছে ভক্তদের ভালবাসা। তাঁরাই আমাকে অনুপ্রেরণা দেন। আমি এটা ভেবেই কাজ করে চলেছি যে, আমাকে ভাল কিছু দিতেই হবে। মহম্মদ রফি সাহেবের পরিবার থেকেও ফুল এসেছে আমার কাছে। এটা একটা বিরাট পাওনা। এভাবেই সবার আশীর্বাদ আর ভালবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।' ২০১৮ সালে হিন্দি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় বিশাখের। হিন্দিতে 'রেহেনা তুম'। বাংলায় 'আমার তুমি'। বেশ জনপ্রিয় হয় অ্যালবামটি। তাঁর নতুন অ্যালবাম কেমন সাড়া পড়ে, সেটাই এখন দেখার।
Congratulations🎉🥳👏 Khub valo laglo
উত্তরমুছুনThank you
মুছুনThank you
উত্তরমুছুনThank you team Esamakalin for this article 🙏
উত্তরমুছুন