সমকালীন প্রতিবেদন : নিজে করোনা আক্রান্ত হয়েও ব্লকের মানুষের কথা ভেবে করোনাকালে কাজের বিরাম দেন নি বনগাঁ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: মৃগাঙ্ক সাহা রায়। তাঁর এবং তাঁর দপ্তরের সহকর্মীদের প্রচেষ্টায় প্রথম ঢেউয়ের পাশাপাশি দ্বিতীয় ঢেউ অনেকটাই সামাল দেওয়া গেছে।
বনগাঁ ব্লক এলাকায় খাতাকলমে প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে করোনাকালে সামাল দেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং। গত বছর যখন প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন সাধারণ মানুষকে বিষয়টি বোঝানোটাই বেশ কঠিন ছিল। প্রতি মুহূর্তে দপ্তরের কর্মীদের নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছিল। প্রথম দিকে আক্রান্তের সংখ্যা খুব সামান্য ছিল। পরের দিকে তা বাড়তে থাকে।
এই ব্লকে প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলে আকাইপুরে। আক্রান্ত হন একজন পুলিশ কর্মী। তিনি নিজেই জানতেন না যে, তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই রিপোর্ট আসার আগে তিনি বহু মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছিলেন। আক্রান্ত হবার খবর ছড়িয়ে পরতেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। সরকারি উদ্যোগে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। প্রথম বছর ভ্যাকসিন বাজারে আসে নি। তখন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা মানুষকে বুঝিয়ে গেছে। এই পরিষেবা দিতে গিয়ে প্রচুর সরকারি কর্মী করোনায় আক্রান্ত হন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর মানুষের একাংশ যেমন পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে সচেতন হয়েছেন, পাশাপাশি আর এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে গাছাড়া ভাব দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সবটাই সামাল দেওয়া গেছে। আর এবছর ভ্যাকসিন এসে পরায় স্বাস্থ্য দপ্তরের ব্যস্ততা অনেক বেড়ে গেছে।বনগাঁ ব্লকের পাশাপাশি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশে বর্তমানে বনগাঁ পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মৃগাঙ্কবাবু। স্বাভাবিকভাবে অখন্ড বনগাঁর প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে। সহকর্মীদের সহযোগিতায় তিনি এই গোটা দায়িত্ব ভালোভাবে সামলাতে পারবেন বলে আশা করছেন।
তিনি জানান, 'বনগাঁ ব্লক এলাকায় প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে এপর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষের টিকাকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যোগান অনুযায়ী প্রায় প্রতিদিনই টিকা দেওয়ার কাজ চলছে। এই ব্লকে এপর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬০০। তারমধ্যে সাড়ে ১৫০০ এর বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে গেছেন।'
আগামীদিনে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে, এই ভাবনায় এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মানুষকে বোঝানো হচ্ছে যে, করোনা এখনও চলে যায় নি। ফলে সবাই পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাপন করুন। বড়দের একটি অংশ যেহেতু টিকা পেয়েছেন, পাশাপাশি বাচ্চাদের টিকাকরণ এখনও শুরু হয় নি। তাই বাচ্চাদের দিকে পরিবারের বড়দের বেশি নজর দিতে বলা হচ্ছে। ৫ বছরের উর্দ্ধে বাচ্চাদের মাস্ক ব্যবহারের অভ্যেস করতে হবে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্ক সাহা রায়ের আশা, এই ব্লকে করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় যেভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখা গেছে, দপ্তরের সহকর্মীদের সহযোগিতায় তৃতীয় ঢেউ এলেও তা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন