সমকালীন প্রতিবেদন : শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম বল ১৩৮ কিলোমিটার বেগে ছুটে আসছে। ম্যাচের সূচনায় সেই বাউন্সারকেই ফুঁ দেওয়ার মতো হুক করে গ্যালারিতে পাঠালেন অভিষেক শর্মা। একই ম্যাচে কব্জির মোচড়ে স্টেডিয়ামের দোতলায় ছক্কা তুললেন শুভমন গিল। ২০২৫ সালের এই দৃশ্য অনেকের চোখে ফিরিয়ে এনেছে ২০০৭ সালের ডারবানের সেই দিনটিকে—যখন ব্রেট লি-কে একই ভঙ্গিতে ১১১ মিটারের বিশাল ছক্কা মেরেছিলেন যুবরাজ সিং।
এই তিন ঘটনার যোগসূত্র একেবারেই স্পষ্ট—গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক। যুবরাজের গড়া গুরুকুল থেকেই উঠে এসেছেন অভিষেক ও শুভমন। তাঁদের ক্রিকেটের মন্ত্র, ব্যাট চালানোর ছন্দ, মানসিক দৃঢ়তা—সব কিছুর নেপথ্যে রয়েছেন যুবরাজ। অথচ আলো-ঝলমলে ক্রিকেট দুনিয়া থেকে দূরে তিনি নিরবে ব্যস্ত প্রতিভা তৈরি করার কাজে।
২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরেও আরাম বা জনপ্রিয় ধারাভাষ্য বেছে নেননি যুবি। ক্যানসারকে জয় করে, বিশ্বকাপ জিতে, ধোনির সঙ্গে নেতৃত্বের আলোচনায় থেকেও তিনি নিজের পথ আলাদা করে নিয়েছেন। প্রশাসন বা মাইক্রোফোন নয়—তিনি গেছেন অ্যাকাডেমির মাটিতে। রোদে-পোড়া মাঠে ঘাম ঝরিয়ে প্রতিভা খুঁজে এনেছেন।
পঞ্জাবের সেই অ্যাকাডেমিতেই যুবরাজের নজরে পড়েন অভিষেক শর্মা ও শুভমন গিল। একসঙ্গে স্কুল ক্রিকেট, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ—তারপর ভারতীয় দলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে। শুভমন ইতিমধ্যেই লাল বলের অধিনায়ক, আর অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার। দু’জনের সাফল্যের পেছনে জহুরি যুবরাজের শাণ দেওয়া স্পষ্ট।
অভিষেককে তিনি নিজের বাড়িতে রেখে শৃঙ্খলা শিখিয়েছেন, কড়া হাতে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছেন। আবার গাড়িতে বসিয়ে অনুশীলনে নিয়ে গিয়েছেন, কাঁধে কিটব্যাগ তুলে দিয়েছেন। শুভমনকে শেখাতে কঠোরতা কম হলেও তাঁর খেলার ভিতকে আরও মজবুত করেছেন যুবরাজ।
অবসরে থেকেও তিনি শুধু অভিষেক-শুভমনেই থেমে নেই। প্রিয়াংশ আর্য, প্রভসিমরন সিংদের মতো প্রতিভাকেও তিনি গড়ে তুলছেন। তাঁদের দিকেও নজর রাখছেন ভারতের প্রাক্তন সাদা বলের সম্রাট। সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায়, “ক্রিকেটার তৈরি করা খুব কঠিন কাজ। বোর্ডের সাহায্য ছাড়াই যুবরাজ সেটা করছে। অভিষেক-শুভমনদের মতো প্রতিভা পঞ্জাব থেকে উঠে আসার পিছনে আসল কৃতিত্ব ওর।”
আজও সোশ্যাল মিডিয়ায় শিষ্যের ছবি দেখে গুরু মন্তব্য করেন—“আমি কিন্তু নজর রাখছি।” যেন মনে করিয়ে দেন, ২০০৭ সালের ছয় ছক্কার ব্যাট এখনও তাঁর মনে অটুট। গুরু হয়তো আলোচনায় নেই। কিন্তু শিষ্যদের ব্যাটের ঝলক দেখলেই বোঝা যায়—যুবরাজ সিং আসলে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত গড়ার অন্যতম কারিগর।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন