সমকালীন প্রতিবেদন : ষষ্ঠী ও সপ্তমীর নির্মল আকাশ আর নিশ্চিন্ত প্যান্ডেল হপিংয়ের পর পুজোর আনন্দে জল ঢেলেছে নবমীর ঝড়-বৃষ্টি। মঙ্গলবার অষ্টমীর রাতে হালকা বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই মণ্ডপ পরিক্রমা সেরেছিলেন রাজ্যবাসী। কিন্তু বুধবার দুপুর গড়াতেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় শুরু হয় প্রবল বৃষ্টিপাত। দুপুর আড়াইটে থেকেই কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ, তারপরই নামে মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া।
পূর্বাভাস অনুযায়ীই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, নবমীর দুপুর থেকে শহর ও আশপাশের জেলাগুলিতে দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ – সর্বত্র পুজো মণ্ডপে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে আচমকা শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি। বহু জায়গায় ছাতা বৃষ্টির দাপটে হার মানে, অনেকে ভিজে ঠাকুর দেখেন, আবার কেউ কেউ মণ্ডপের ভিতরেই আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
আবহাওয়াবিদদের মতে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণাবর্তের জেরে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর নতুন করে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবেই বুধবার দুপুর থেকে আবহাওয়ার রূপ বদলাতে শুরু করে। বিকেলের মধ্যেই এই ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হবে বলেও জানিয়েছে হাওয়া অফিস। আগামী দু’-তিন দিন এই নিম্নচাপের প্রভাবেই দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, দশমীর দিন বৃহস্পতিবার কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির পরিমাণ ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামেও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
উত্তরবঙ্গেও নবমী থেকেই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। দশমীতে দার্জিলিং-সহ পার্বত্য পাঁচ জেলায় দুর্যোগ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একাদশী ও দ্বাদশীতেও মালদহ এবং দুই দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। শনিবার পর্যন্ত এই পরিস্থিতি বজায় থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপটি আগামী ৩ অক্টোবরের মধ্যে আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এটি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও দক্ষিণ ওড়িশার উপকূলের মধ্যে দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে। এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পরবর্তী কয়েক দিন ঝড়বৃষ্টি চলবে।
পুজোর শুরুতে আবহাওয়া ছিল একেবারেই অনুকূল। ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে নিরবচ্ছিন্ন উৎসব চলেছে। কিন্তু পুজোর শেষ লগ্নে ফের নিজের ‘ফর্মে’ ফিরেছে বৃষ্টি। বৃহস্পতিবারের ভারী বর্ষণ ও পরবর্তী কয়েক দিনের জন্য আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছে হাওয়া অফিস। সব মিলিয়ে, পুজোর শেষ পর্বে দক্ষিণবঙ্গজুড়ে আবারও সক্রিয় হচ্ছে বর্ষা। বৃষ্টির মাঝেই এবার ঠাকুর দর্শনের পরিকল্পনা সাজাতে হবে শহরবাসীকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন