সমকালীন প্রতিবেদন : শরৎ শেষে উৎসবের আমেজ এখনও ফুরোয়নি। তাই যারা পুজোর পর একটু দূরে ঘুরে এসে মনটাকে নতুন করে সাজাতে চান, তাদের জন্য দারুণ এক গন্তব্য হতে পারে ঝাড়গ্রাম–ঘাটশিলা–টাটা জুবিলি পার্ক–ডিমনা লেকের এই ভ্রমণপথ। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের সীমানা জুড়ে বিস্তৃত প্রকৃতির রঙিন ক্যানভাস যেন এক সফরেই দেখা যায় এখানে।
ঝাড়গ্রাম: লাল মাটির রাজ্য–
কলকাতা থেকে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার দূরের ঝাড়গ্রাম এখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলারই এক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সাল, সেগুন, মহুয়া, শিমুলে ঘেরা এই অরণ্যঘেরা শহর প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ। এখানে দেখার মতো জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে– রাজশাসনের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, বর্তমানে হেরিটেজ হোটেল হিসেবেও ব্যবহৃত ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি। এছাড়া রয়েছে, চিলকারা, খড়বোনা, কনকাবতী বাঁধ, যেখানে জলাধারের পাশে বিকেলের সূর্যাস্ত অসাধারণ। রয়েছে ডুলুং নদীর ধারে ট্রাইবাল গ্রাম। আদিবাসী সংস্কৃতির ছোঁয়া ও ঐতিহ্যবাহী নৃত্য দেখতে চাইলে এটি অবশ্যই ঘোরার মতো। কনকদূর্গার মন্দির, ঝিল্লি পাখিরালয়ও দেখা যেতে পারে। থাকার ব্যবস্থা হিসেবে ঝাড়গ্রাম ট্যুরিস্ট লজ (ডব্লিউবিটিডিসি), রাজবাড়ি হেরিটেজ রিসর্ট, সহরজোড়া ও ছোটখাটো হোমস্টে সহজলভ্য।
ঘাটশিলা: সাহিত্য ও প্রকৃতির মিলন–
ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় ৬৫ কিমি দূরের ঘাটশিলা মানেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি-ভূমি। সুবর্ণরেখা নদীর তীরে এই ছোট্ট শহরে শান্তি, পাহাড় আর নদীর মেলবন্ধন। এখানে দেখার মতো জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে– বুরুডি লেক, যেটি পাহাড়ে ঘেরা একটি শান্ত জলাধার, নৌকা ভ্রমণেরও সুযোগ আছে। ফুলদুঙ্গরি পাহাড়, এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা অমূল্য। বিভূতিভূষণ স্মৃতি মন্দির, যেটি সাহিত্যিকের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে। সুবর্ণরেখা নদীর উপর ড্যাম। থাকার ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজম লজ, প্রাইভেট হোটেল ও গেস্ট হাউস (প্রতি রাতে ₹১০০০–₹২০০০ টাকায় ভালো অপশন)।
টাটা জুবিলি পার্ক: শহরের বুকে সবুজ স্বর্গ–
ঘাটশিলা থেকে টাটানগর মাত্র ৩০ কিমি। শহরের মাঝখানে এই জুবিলি পার্ক টাটার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্থাপিত হয়েছিল। রঙিন ফোয়ারা, সুসজ্জিত গার্ডেন, মিউজিক্যাল লাইট শো এবং চিড়িয়াখানা মিলিয়ে এটি এক পূর্ণাঙ্গ পরিবারের বিনোদন কেন্দ্র। সন্ধ্যাবেলায় আলোয় ঝলমল করা পার্কের সৌন্দর্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
ডিমনা লেক: নীল আকাশের প্রতিবিম্ব–
জুবিলি পার্ক থেকে প্রায় ১৩ কিমি দূরের ডিমনা লেক হলো টাটার জলাধার। সুবর্ণরেখা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই লেক নীলজলে ভরপুর। সকালে বা বিকেলে এখানে গেলে মন ভরে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্যে। লেক ঘিরে পিকনিক ও ফটোগ্রাফির দারুণ সুযোগ। থাকার ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে টাটা বা মানিফিতের হোটেল, রিসর্ট এবং ট্যুরিস্ট গেস্ট হাউস সহজলভ্য।
কিভাবে যাবেন–
ট্রেনে: কলকাতা (হাওড়া/শিয়ালদহ) থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত একাধিক ট্রেন রয়েছে। আর ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘাটশিলা, টাটা ও ডিমনা লেক ঘোরা যায়। সড়কপথে গাড়িতে কলকাতা থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ৬ ধরে কোলাঘাট–খড়গপুর–ঝাড়গ্রাম—মোট প্রায় ৫ ঘণ্টার রাস্তা। এখানে বেড়ানোর সেরা সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময় প্রকৃতি থাকে রঙিন ও মনোরম। শীতকালে জঙ্গল সাফারি ও পিকনিকের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন