Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫

পাহাড়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ ও সিকিম, মৃত অন্তত ২০ – বন্ধ রাস্তা ও রেল পরিষেবা, পাহাড় ছাড়ছেন পর্যটকরা

 

Heavy-rain-in-mountains

সমকালীন প্রতিবেদন : প্রবল বর্ষণ ও ধারাবাহিক ধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। একাধিক এলাকায় ধস নামার পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ দুধিয়া লোহার সেতু ও বিজনবাড়ি সেতু। মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ২০ জনে পৌঁছেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর, তবে সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। রবিবার সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ। একই সঙ্গে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রেল পরিষেবাও।

গত তিন দিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টিতে কার্যত ভেঙে পড়েছে পাহাড়ি অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারসহ উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলায় বৃষ্টির তীব্রতা সবচেয়ে বেশি ছিল পাহাড়ি এলাকায়। টানা বর্ষণের ফলে মাটি আলগা হয়ে যাওয়ায় শনিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে ধস। বন্ধ হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ধসে চাপা পড়ে ও জলবন্দি হয়ে মৃত্যু হয়েছে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার। এখনও পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হলেও প্রশাসনের আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কেউ আটকে থাকতে পারেন।

ধস ও ভারী বৃষ্টির কারণে শিলিগুড়ির সঙ্গে ঋষিখোলা ও পেডং-এর যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা মিরিকেরও। সেখানে একাধিক ধসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৯ জনের। বিপদসীমার অনেক ওপরে বইছে তিস্তা, জলঢাকা-সহ প্রায় সমস্ত নদী। ভুটানের পাহাড় থেকে নেমে আসা জল পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। ফলে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পাহাড়ি পথে ধসের কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু রাস্তা, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন জনপ্রিয় পর্যটনস্থলও। ফলে দ্রুত পাহাড় ছেড়ে নিচু জমিতে ফিরে আসছেন বহু পর্যটক। অনেকেই কলকাতায় ফেরার চেষ্টা করছেন। বিপর্যস্ত রেল পরিষেবাও — একাধিক লাইনে জল জমে থাকায় অনেক দূরপাল্লার ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে, কিছু ট্রেনের গন্তব্য পরিবর্তন করা হয়েছে, আবার কিছু ট্রেনের সময়সূচিও সংশোধন করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

এই পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারই। নবান্নে খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। যেকোনও অসুবিধায় রাজ্য প্রশাসন মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। উদ্ধারকাজও চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, “দার্জিলিঙে সেতু ভেঙে পড়ায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি রইল আমার সমবেদনা। আহতরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন, এই কামনা করি। টানা ভারী বৃষ্টি ও ধসের কারণে দার্জিলিং ও সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে সমস্ত সম্ভাব্য সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

পর্যটকদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা। রবিবার শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে তিনটি বিশেষ বাস চালানো হবে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস থেকে একটি বাস ছাড়বে সকাল সাড়ে পাঁচটায়, পরবর্তীতে বিকেল ছ’টা ও সন্ধ্যা সাতটায় আরও দুটি বাস রওনা দেবে। অনলাইনে টিকিট বুকিংয়ের পাশাপাশি স্ট্যান্ড থেকেও টিকিট পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে আরও বিশেষ বাস চালানোর আশ্বাসও দিয়েছে সংস্থা।

গত ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছুঁয়েছে ৩০০ মিলিমিটার, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, আগামী ২৪ ঘণ্টাতেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে নতুন করে ধস ও বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ আকার নিয়েছে।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন