Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাংলার অনেক স্থানেই পুজিত হয় কালো দুর্গা

 ‌

Black-Durga

সমকালীন প্রতিবেদন : কৃষ্ণবর্ণের কালী নয় দুর্গা! বাংলার বুকেই হয় এই দুর্গার পুজো। ভুল করে গায়ের রং কালো করে দেওয়ার পর? এক নয় একাধিক কালো দুর্গার পুজো। এইসব পারিবারিক পুজোর নেপথ্যে রয়েছে রহস্যে মোড়া কাহিনী। স্বপ্নে পাওয়া থেকে দুর্ঘটনা; কালো দুর্গার ইতিকথা নিয়েই আমাদের আজকের প্রতিবেদন।

আজ আর মৃৎশিল্পীদের প্রতিমা গড়ায় ভুল হয়না। বরং রীতি মেনে বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে কৃষ্ণবর্ণা দুর্গার পুজো। নদিয়া জেলায় কালো দুর্গার আরাধনা হয়। হাঁসখালির বাহিরগাছি গ্রামের দেবীমূর্তির রং কুচকুচে কালো। এই পুজোটা আশ্রমের। শান্তি আশ্রম। ইতিহাস বলে, এই পুজো ছিল বাংলাদেশের পাবনা জেলার স্থলগ্রামের জমিদার বাড়ির। সেই বাড়ির ভূপেশচন্দ্র ভট্টাচার্য হিমালয় ভ্রমণে বেরিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যান। 

তারপরেই বাহিরগাছিতে পৌঁছে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে দুর্গাপুজো শুরু করেন। কিন্তু দেবীর গায়ের রং কালো কি করে? জানা যায়, মৃৎশিল্পী ভুল করে দেবীর গায়ে কালো রং করে ফেলেছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, ঘুমের ঘোরে রং করতে গিয়ে বিপত্তি বাধান তিনি। তার পরেই দেবীর স্বপ্নাদেশ। তখন থেকে আজ পর্যন্ত কৃষ্ণবর্ণের রূপেই পুজো পান মা। 

আসলেই মা দুর্গা হবেন গৌরবর্ণা, স্বর্ণবর্ণা, পীতবর্ণা; এটা যেন মানুষ তথা বাঙালীর চোখে বসে গেছে। আর সেই পুরোনো গতে বাঁধা গল্পের ধাঁচেই প্রতিমা গড়েন বাংলার মৃৎশিল্পীরা। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে, কৃষ্ণবর্ণের দুর্গারও আরাধনা হয় এই বাংলাতেই। নদিয়ার মতো বর্ধমানের ভট্টাচার্য পরিবারে প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন পুজো। এখানে ‘ভদ্রকালীরূপী দুর্গা’র পুজো হয়। দেবীর গায়ের রং কালো। পুজো শুরু হয়েছিল ওপার বাংলায়। 

প্রচলিত কাহিনি অনুসারে, এই পরিবারের পূর্বপুরুষকে দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশ দিয়ে ভদ্রকালীরূপে পুজো করতে বলেছিলেন। আর সেই থেকেই কালো দুর্গার আরাধনা ভট্টাচার্য বাড়িতে। যদিও অনেকেই বলেন প্রতিমাশিল্পী ভুলবশত কালো রং করে ফেলায় সেই মূর্তিতেই পুজো করা হয় নিয়ম মেনে। কিন্তু কোন কাহিনী ঠিক? আদতে ঠিক কি ঘটেছিল?

শোনা যায় দেশভাগের পর ভট্টাচার্য পরিবার এপার বাংলায় চলে আসে। তখন যেহেতু পরিবারের বিভিন্ন সদস্য কর্মসূত্রে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন তাই আসানসোল আর কলকাতায় পুজো শুরু হয়। প্রথমে আসানসোলে, পরে বছর পাঁচেক দুর্গাপুরে পুজো হয়। সেখান থেকে সোজা কলকাতার বেলেঘাটায় পুজো স্থানান্তরিত হয়। বর্ধমানের পাশাপাশি বেলেঘাটার রামকৃষ্ণ নস্কর লেনের ভট্টাচার্য বাড়িতেও কালো দুর্গার পুজো হয়। 

না এখানেই শেষ নয়। কালো দুর্গা আছে উত্তর দিনাজপুরেও। এই জেলার কালিয়াগঞ্জে ধনকৈল গ্রামের পাকড়াশি বাড়ির দুর্গাও কিন্তু কালো। জানা যায়, ওপার বাংলার পাবনায় এই পুজোর সূচনা। বলাই বাহুল্য, বাংলার প্রায় প্রতিটি কালো দুর্গাপুজোর শিকড় লুকিয়ে ওপার বাংলায়। কিন্তু কালীর মতো দুর্গা? শাস্ত্র কি বলছে? শাস্ত্র মতে, দুর্গা অতসী পুষ্পবর্ণা। অতসী শব্দের অর্থ ক্ষুমা। গ্রাম বাংলার ক্ষুমা ফুলের রঙ কিন্তু কালো। ফলে তেমন ভাবে দেখলে কালো দুর্গা মোটেও অশাস্ত্রীয় নয়।‌‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন