সমকালীন প্রতিবেদন : দেশের কর ব্যবস্থায় আসছে বড় পরিবর্তন। চার স্ল্যাবের বদলে এবার থেকে মাত্র দুটি হারে জিএসটি ধার্য হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে এই প্রস্তাবে সায় দিলেন বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। বর্তমানে প্রচলিত ৫, ১২, ১৮ এবং ২৮ শতাংশের জিএসটি স্ল্যাবের মধ্যে থেকে বাদ পড়ছে ১২ ও ২৮ শতাংশ। কেবল রাখা হচ্ছে ৫ ও ১৮ শতাংশ হার। তবে ক্ষতিকর এবং অতিবিলাসী পণ্যের ক্ষেত্রে আলাদা বন্দোবস্ত থাকছে। মদ, সিগারেট, বিলাসবহুল গাড়ি, মাদক দ্রব্য ইত্যাদি পণ্যের উপর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ কর ধার্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বিশেষ করকে ‘সিন ট্যাক্স’ নাম দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মন্ত্রিগোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরি। গোষ্ঠীতে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, কর্নাটক ও কেরলের প্রতিনিধি। বৈঠক শেষে সম্রাট বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবে আমরা সায় দিয়েছি। তবে প্রত্যেকে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। রাজ্যগুলির কিছু অতিরিক্ত প্রস্তাবও আছে, সেগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জিএসটি কাউন্সিল।”
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি, অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বৈঠকে জানান, জিএসটি সংস্কারের ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি কতটা হতে পারে, সে বিষয়ে কেন্দ্র কিছুই বলেনি। তিনি এও প্রস্তাব দেন যে, ক্ষতিকর পণ্যে ৪০ শতাংশ করের পাশাপাশি রাজস্ব ক্ষতি রোধে আরও বাড়তি কর আরোপের সুযোগ রাখতে হবে। পাশাপাশি জীবন বিমা ও স্বাস্থ্যবিমার উপর থেকে বর্তমানে আরোপিত ১৮ শতাংশ জিএসটি প্রত্যাহারের প্রস্তাবে তিনি সমর্থন জানান।
তবে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সতর্ক করে দেন, বিমা সংস্থাগুলি যেন এই ছাড়ের সুযোগ নিয়ে প্রিমিয়াম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে ঠকাতে না পারে, সে ব্যাপারে নজরদারির প্রয়োজন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবছর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেই এই জিএসটি সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন দীপাবলির আগেই নতুন কর কাঠামো কার্যকর হবে। সেই লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ শুরু করেছে কেন্দ্র।
নতুন ব্যবস্থায় ৯০ শতাংশেরও বেশি পণ্য-পরিষেবার দাম কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, যেসব পণ্যে আগে ১২ শতাংশ কর ছিল, সেগুলিতে এখন ৫ শতাংশ জিএসটি লাগু হবে। আর ২৮ শতাংশ করের আওতায় থাকা অধিকাংশ পণ্য আসবে ১৮ শতাংশ স্ল্যাবে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নানা জিনিস সস্তা হতে পারে। উৎসবের মরশুমে এই কর ছাঁটাই সাধারণ মানুষকে বড় স্বস্তি দেবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তবে ‘সিন ট্যাক্স’-এর আওতায় থাকা তামাকজাত দ্রব্য, মদ, বিলাসবহুল গাড়ি, ঠান্ডা পানীয়, ফাস্ট ফুড, কফি, চিনি এমনকি পর্নোগ্রাফির মতো ক্ষেত্রে বাড়তি করের বোঝা বহন করতে হবে ভোক্তাদের। সরকারের উদ্দেশ্য, এই সমস্ত ক্ষতিকর বা অতিবিলাসী পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।
জিএসটি সংস্কারের এই প্রস্তাব এখন যাবে জিএসটি কাউন্সিলে। আগামী সেপ্টেম্বরে সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা। সেখানে অনুমোদন মিললেই কার্যকর হবে নতুন কর কাঠামো। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, এটি হবে দেশের কর ব্যবস্থার “দ্বিতীয় প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার”, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও সরলীকরণ আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন