সমকালীন প্রতিবেদন : বাঙালির বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। সারা বছরের অপেক্ষার শেষে মহালয়ার সঙ্গে শুরু হয় দেবীপক্ষ। এবছর ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া, আর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে বচ্ছরকার সেই কাঙ্ক্ষিত চার দিন। পুজো এলেই বাঙালির মনে জাগে এক প্রশ্ন—মা দুর্গা কিসে আসছেন আর কিসে যাচ্ছেন? সেই বাহনের সঙ্গেই নাকি জড়িয়ে থাকে শুভ-অশুভর যোগ।
শাস্ত্র মতে, এ বছর দেবীর আগমন গজে বা হাতিতে, যা শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। কথিত আছে, গজে আগমন হলে ধরিত্রী সবুজে শ্যামলা হয়ে ওঠে, শস্যভাণ্ডার ভরে ওঠে। তবে গমন দোলায়, যার ফল নাকি মহামারী বা মড়ক। এই ধারণা নিয়েই প্রতিবছর জল্পনা বাড়ে মানুষের মধ্যে।
তবে এর ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। তাঁর মতে, “দেবীর আগমন ও গমন কখনও অমঙ্গলের হতে পারে না। মা আসছেন, বাপের বাড়িতে ক’দিন থেকে আবার ফিরে যাচ্ছেন—এই আসা কখনও অশুভ হতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, অনেকেই বারের হিসেবে দেবীর আগমন-গমনের ব্যাখ্যা করেন, তবে সেটিও অর্থহীন। উদাহরণ টেনে তিনি ব্যাখ্যা করেন, যেমন সোমবার শিবপুজো করলে বিশেষ ফল লাভ হয় বলা হয়, তেমনি দেবীর আগমন ও গমনকে দিনের নিরিখে শুভ-অশুভ বলে ব্যাখ্যা করাটা যুক্তির বাইরে।
কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত উদ্ধৃত করে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী বলেন, “তারে জানে সুকৃতি যে দোলা-ঘোড়া চড়ে।” এখানে দোলা মানে নাগরদোলা নয়, বরং পালকি। অর্থাৎ দোলায় চড়াও শুভের প্রতীক। তাহলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দোলাকে অশুভ বলে ধরা হল কেন? ইতিহাসবিদের মতে, এই বদল মানুষের কুসংস্কার আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের ব্যাখ্যা পাল্টে যাওয়ার ফল।
অতএব, দেবীর আগমন গজে হোক কিংবা গমন দোলায়, বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো সর্বদাই আনন্দ, মিলন আর আশার উৎসব। মা আসেন আশীর্বাদ নিয়ে, বিদায় নেন আশ্বাস দিয়ে—এখানেই নিহিত শুভর অর্থ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন