সমকালীন প্রতিবেদন : রাজ্য সরকারের “আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান” প্রকল্পের প্রশংসা করে বিপাকে পড়লেন বিজেপি প্রধান। এই প্রশংসার কথা প্রকাশ্যে চলে আসতেই একদিকে যেমন তৃণমূল বিষয়টিকে নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে, অন্যদিকে বিজেপি তাদের দলের প্রধানের কাছে এব্যাপারে জবাবদিহি চাইতে চলেছে।
বাগদা ব্লকের কোনিয়ারা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত— বুধবার এখানে যেন ছোট্ট রাজনৈতিক ভূমিকম্প। করঙ্গ এফপি স্কুল প্রাঙ্গণে বসেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প “আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান” শিবির। সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে সরকারি আধিকারিকদের সরাসরি উপস্থিতি, সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি— সব মিলিয়ে জমজমাট আয়োজন।
কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এক ভিন্ন দৃশ্য। শিবিরে হাজির পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান সমীর বিশ্বাস। মঞ্চ থেকে খোলাখুলি মুখ্যমন্ত্রীর জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রশংসা করলেন তিনি। শুধু তাই নয়— ধন্যবাদ জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। রাজনৈতিক সৌজন্য নাকি ভিন্ন বার্তা— এখানেই শুরু বিতর্ক।
ঘটনার পরেই তৃণমূল কংগ্রেস সুযোগ হাতছাড়া করেনি। দলের স্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, “যে প্রতিপক্ষ এতদিন রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল, তারাও আজ মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পের প্রশংসা করছে— এটাই প্রমাণ, এই উদ্যোগ কতটা সফল।” তৃণমূল শিবিরের দাবি, গ্রামবাসীদের সরাসরি অভিযোগ শোনা ও দ্রুত সমাধান দেওয়ার জন্যই এই প্রকল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর বিরোধী শিবির থেকেও প্রশংসা আসায়, মমতার ‘ডেলিভারি মডেল’-এর প্রতি মানুষের আস্থা আরও দৃঢ় হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিজেপি প্রধানের এই বক্তব্য নিছক সৌজন্য নাও হতে পারে। স্থানীয় স্তরে জনসংযোগ বাড়াতে বিরোধী নেতাদের অনেক সময় প্রশাসনিক কর্মসূচিতে সুর নরম করতে দেখা যায়। তবে সমীর বিশ্বাসের মতো পঞ্চায়েত প্রধানের প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন, আসন্ন পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে বিজেপির ভেতরেই এই মন্তব্য নিয়ে মতভেদ তৈরি হয়েছে। কারণ রাজ্য রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করা, বিশেষত প্রকাশ্যে, দলের কড়া অবস্থানের বিপরীত সুর হিসেবে ধরা হয়। এব্যাপারে বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল বলেন, সমীর বিশ্বাসের এই মন্তব্য তার ব্যক্তিগত। দল তা সমর্থন করে না। তিনি কেন এমন মন্তব্য করেছেন, তা জানতে হবে।
“আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান” প্রকল্পে প্রতিটি ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শিবির বসিয়ে স্বাস্থ্য, জমি, সামাজিক সুরক্ষা, অবকাঠামো— নানা বিষয়ে সরাসরি সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়। বাগদার এই শিবিরেও বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ মানুষ তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন, তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের আশ্বাস পান।
ঘটনাটি আপাতদৃষ্টিতে একটি প্রশাসনিক কর্মসূচিতে বিরোধী নেতার সৌজন্য প্রকাশ হলেও, রাজনৈতিক অঙ্গনে তা অনেক গভীর তাৎপর্য বহন করছে। সমীর বিশ্বাসের প্রশংসা ভবিষ্যতে স্থানীয় রাজনৈতিক মেরুকরণে নতুন সমীকরণ আনতে পারে— এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন