সমকালীন প্রতিবেদন : পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বে এল বড় পরিবর্তন। বহু জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে নিযুক্ত হলেন বর্ষীয়ান নেতা শমীক ভট্টাচার্য। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বুধবার দুপুরে মনোনয়নপত্র জমা দেন শমীক এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অন্য কোনও মনোনয়ন না পড়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাঁর সভাপতি হওয়া কার্যকর হয়ে যায়।
শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য বিজেপির একজন আদিকর্মী। মাত্র ৮ বছর বয়সে স্বয়ংসেবক সংঘে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে দক্ষিণ হাওড়া মণ্ডলের যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজের সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন। একটানা ১১ বছর রাজ্য যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। এরপরে তিন দফায় রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় কার্যকরী সমিতির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব সামলান। শুধু সংগঠনের ভিতরে নয়, শমীক নির্বাচনী রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ মুখ। বসিরহাট কেন্দ্র থেকে বিধায়ক ছিলেন তিনি। বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ এবং বিজেপির মুখপাত্র হিসেবেও পরিচিত।
সুকান্ত মজুমদারের জায়গায় শমীক ভট্টাচার্যর আসা একদিকে যেমন নেতৃত্বে রদবদলের ইঙ্গিত দেয়, তেমনই কেন্দ্রেরও একটি স্পষ্ট বার্তা—আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে দলকে এক নতুন কৌশলে সাজাতে চায় বিজেপি। দলের অন্দরেই দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে। অনেক নেতা-কর্মীই চাইছিলেন এমন এক সভাপতি, যিনি তৃণমূল স্তর থেকে উঠে এসেছেন এবং যিনি দলের সাংগঠনিক গতিবিধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন। সেই কারণেই শমীক ছিলেন স্বাভাবিক পছন্দ।
সম্প্রতি 'অপারেশন সিঁদুর' এর সাফল্যের বার্তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন শমীক ভট্টাচার্য। তাতে স্পষ্ট, দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর ওপর আস্থা রাখছে। বিজেপির রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম হল সংগঠনের ভাঙন, দুর্বল ময়দানি প্রস্তুতি এবং অভ্যন্তরীণ বিভেদ। এই সংকটের সময় একজন অভিজ্ঞ সংগঠকের নেতৃত্বে দলকে ফের সংগঠিত করতে চাইছে কেন্দ্র।
বিধানসভা ভোট যতই এগিয়ে আসছে, রাজ্যে বিজেপির ভাঙন ও অস্থিরতা নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে। একাধিক কর্মী দল ছেড়েছেন, স্থানীয় নেতৃত্বে অসন্তোষ রয়েছে। তৃণমূল স্তরে বিজেপি অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। শমীক ভট্টাচার্যের প্রথম কাজ হবে দলীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং জেলাস্তরে সংগঠনকে চাঙ্গা করা। নতুন সভাপতির শপথ নয়, এবার তাঁর কাজে নজর থাকবে দলের সমস্ত স্তরের নেতা-কর্মীদের। বিজেপি-র সংগঠন কীভাবে পুনর্গঠিত হয়, শমীক ভট্টাচার্যের অধীনে কোন নতুন স্ট্র্যাটেজি গৃহীত হয়, এবং সবচেয়ে বড় কথা—তিনি দলকে কতটা ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেন—তা-ই ঠিক করবে ২০২৬-র বিধানসভা ভোটের ভাগ্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন