সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতীয় ক্রিকেটে এমন কিছু নাম আছে, যাঁদের উপস্থিতি এক একটা সময়ের প্রতীক। শচীন তেণ্ডুলকরের সময় ছিল ব্যাটের রাজত্ব, তাঁর আউট মানেই দেশের কোটি ভক্তের আশা শেষ। কারণ, তাদের কাছে ম্যাচ তখন শেষ! সময় বদলেছে। ক্রিকেটের ফরম্যাট বদলেছে। কিন্তু আবেগের বদল হয়নি। শচীনের সেই জায়গা আজ দখল করেছেন একজন বোলার—জশপ্রীত বুমরা। লাল বল, সাদা বল—যেখানেই হোক, বিপদের সময় তাঁর হাতে বল থাকলেই একটা আশ্বাস পাওয়া যায়। কিন্তু সত্যিই কি বুমরা ছাড়া ভারতীয় টেস্ট দল অসহায় হয়ে পড়ে? পরিসংখ্যানই দিচ্ছে চমকে দেওয়ার মতো উত্তর।
২০১৮ সালে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে জশপ্রীত বুমরা ভারতের টেস্ট বোলিং আক্রমণের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছেন। এই সময়ের পর থেকে ১৪৮২ ওভার করেছেন। যা ভারতের আর কোনও বোলার করেননি। তবুও তখন পাশে মহম্মদ শামি, ঈশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবরা ছিলেন। এখন রয়েছেন মহম্মদ সিরাজ। তিনি খেলেছেন ৩৭ টি টেস্ট, আকাশ দীপ খেলেছেন ৭ টি টেস্ট, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ খেলেছেন ৪ টি টেস্ট, আর অর্শদীপ সিং এবার প্রথম খেলছেন। ফলে অভিজ্ঞতার ফারাকটা স্পষ্ট।
ভারতীয় দলে বুমরা থাকাকালীন ৪৬টি টেস্টে ভারত জিতেছে ২০টিতে, হেরেছে ২২টিতে, আর ড্র হয়েছে চারটিতে। বিদেশে ৩৪টির মধ্যে ১২টিতে জয়, ১৮টিতে হারের পাশাপাশি ৪টিতে ড্র হয়েছে। আবার সেনা দেশগুলির মধ্যে ৩২টির মধ্যে জিতেছে মাত্র ১০টিতে। জয়ের শতাংশ ৩১। এক্ষেত্রে খুব একটা সাফল্য চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে, বুমরার অভিষেকের আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৭-র ডিসেম্বরের আগে ভারত সেনা দেশগুলিতে অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১১৩টি টেস্ট খেলেছে। জিতেছে মাত্র ১০টিতে। অর্থাৎ গত ৬ বছরেই জিতেছে বাকি ৮টি টেস্ট। এমন নয় যে, সব ক্ষেত্রে বুমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু বুমরার উপস্থিতি যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
বুমরার অভিষেকের পর চোট-আঘাত বা অন্যান্য কারণে তাঁকে ছাড়া ভারত ২৬টি টেস্ট খেলেছে। তাতে জয় পেয়েছে ১৮টিতে, হার হয়েছে মাত্র ৫টিতে, ড্র ৩টিতে। বিদেশে ৮টি টেস্টের মধ্যে জয় চারটিতে। হার ৩টিতে, ড্র ১টিতে। এবার সেটা সেনা দেশের খেলায় সেখানে ৪টি টেস্টে মাত্র একটি জিতেছে ভারত, হার হয়েছে তিনটিতে। একমাত্র জয়টি এসেছিল ২০২১-র গাব্বার সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে।
টেস্টে ৪৬ ম্যাচে বুমরার মোট উইকেট সংখ্যা ২১০। ইনিংসের সেরা বোলিং ২৬ রানে ৬ উইকেট। গড় ১৯.৬০। বিদেশের মাটিতে ৩৪টি টেস্টে খেলেছেন তিনি। সেখানে উইকেট সংখ্যা ১৬৩। অর্থাৎ, বিদেশেই সাফল্য বেশি। তার মধ্যে সেনা দেশগুলিতে উইকেট সংখ্যা ১৫০টি। অর্থাৎ, বুমরার ভূমিকা যে কতটা, সেটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে।
বুমরা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য আশীর্বাদ— সেটা আর পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু একই সঙ্গে তা একটি গভীর সংকেতও বয়ে আনে— এত বড় একটি ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের বোলিং সাফল্য কি কেবল একজনের উপর নির্ভর করবে? এজবাস্টন টেস্টে বুমরাহ অনুপস্থিত। ভারতীয় দলে টেস্ট অভিষেকের জন্য তৈরি অর্শদীপ সিং। সময় বলবে, বুমরাহ ছাড়া এই ‘নতুন ভারত’ কতটা প্রস্তুত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন