Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনা : প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য

 

Air-India-plane-crash

সমকালীন প্রতিবেদন : গত ১২ জুন আমদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রান হারিয়েছিলেন ২৪০ জন যাত্রী এবং মাটিতে থাকা আরও ১৯ জন। এই দুর্ঘটনার এক মাস পর অবশেষে প্রকাশ পেল ভারতের এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)-র প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট। ১৫ পাতার এই রিপোর্টে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে জানানো হল, সেই মর্মান্তিক মুহূর্তে কী ঘটেছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটিতে।


রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমানটি আমদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে। বিমানে থাকা ২৪১ জনের মধ্যে ২৪০ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার সময় স্থানীয় সময় ছিল রাত ১টা ৩৮ মিনিট। দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসাবে উঠে এসেছে বিমানের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও ইঞ্জিনের অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া।


রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি পয়েন্টে কী রয়েছে?

১. ফুয়েল কাট-অফ সুইচ হঠাৎ সক্রিয় : রিপোর্টে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় ১টা ৩৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে, বিমানটি যখন ১৮০ নট গতিবেগে ছিল, ঠিক তখনই দুই ইঞ্জিনের ফুয়েল কাট-অফ সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাট-অফ’ অবস্থায় চলে যায়।

২. প্রথম ইঞ্জিন আংশিকভাবে পুনরুদ্ধার হয় : ইঞ্জিন নম্বর ১ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হলেও, পরে ধীরে ধীরে তার কোর ডিসিলারেশন বন্ধ হয়ে পুনরায় কার্যকর হয়।


৩. দ্বিতীয় ইঞ্জিনও থেমে যায় : একই সময় দ্বিতীয় ইঞ্জিনও বন্ধ হয়ে যায়। যদিও তাকে পুনরায় চালু করার চেষ্টা হয়, তবে ইঞ্জিনের গতি স্বাভাবিক হয়নি।

৪. ককপিটে বিভ্রান্তি ও সংশয় : ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়েছে এক পাইলটের প্রশ্ন—"তুমি কেন বন্ধ করেছ?" অপর পাইলট জবাব দেন, “আমি করিনি।” এই সংলাপ পাইলটদের মধ্যে বিভ্রান্তির ইঙ্গিত দেয়।


৫. ইঞ্জিন রিলাইটের চেষ্টা : ঘটনার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জ্বালানি সুইচ ফের ‘রান’ অবস্থায় আনা হয় এবং ইজিটি বা একজস্ট গ্যাস টেম্পারেচার বেড়ে যায়, যা ইঞ্জিন পুনরায় চালুর ইঙ্গিত দেয়।

৬. ইঞ্জিন স্পিড নেমে যায় ন্যূনতমের নিচে : ইঞ্জিন দুটির কোর স্পিড (এন২) ন্যূনতম আইডল স্পিডেরও নিচে নেমে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে রিপোর্ট।


৭. রিলাইট প্রচেষ্টায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি : ফুয়েল সুইচ ফের ‘রান’ অবস্থায় আনলে ইঞ্জিনে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল, ইঙ্গিত দিচ্ছে ইঞ্জিনে জ্বালানি প্রবাহ শুরু হলেও তা কার্যকর হয়নি।

৮. ব্ল্যাক বক্সের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত : পিছনের ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে প্রচলিত উপায়ে ডেটা উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

৯. তদন্ত অব্যাহত : তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এখনও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের থেকে তথ্য সংগ্রহ চলছে। এই তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ কারণ বিশ্লেষণ করা হবে।


১০. সুরক্ষা সুপারিশ এখনও নেই : এএআইবি জানিয়েছে, বর্তমানে বোয়িং ৭৮৭-৮ অথবা জিইএনএক্স-১বি ইঞ্জিন পরিচালনাকারীদের জন্য কোনও নতুন সুরক্ষা নির্দেশিকা জারি করা হয়নি।

এই প্রাথমিক রিপোর্টে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত কারণের একটি রূপরেখা দেওয়া হলেও, চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগে পর্যন্ত তদন্ত চলবে। আন্তর্জাতিক স্তরে এই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং বোয়িং ও জিই উভয় সংস্থার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।


প্রসঙ্গত, এটি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার গভীরতা, প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও মানবিক বিভ্রান্তির জটিল মিশ্রণ এই দুর্ঘটনাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে বিশ্ব বিমান নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন