সমকালীন প্রতিবেদন : কলকাতায় থাকাকালীন যুদ্ধ বাধলে প্রাণ বাঁচাতে লুকোবেন কোথায়? আদৌ কি বাঙ্কারের ব্যবস্থা রয়েছে? কোন কোন জায়গা সেফ শহর কলকাতার বুকে? মেট্রোই ভরসা? কি করবেন? কি করবেন না? সব ডিটেইলসে থাকবে আজকের এই প্রতিবেদনে।
প্রথমেই যে বিষয়টা ক্লিয়ার করে দিতে হচ্ছে, কলকাতায় এখন আলাদা করে কোনো বাঙ্কার নেই। সেক্ষেত্রে যেটা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনগুলোকে বোমা বা মিসাইল হামলার সময় নিরাপদ বাঙ্কার হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
১) গভীর ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশন : কলকাতার মেট্রো রেলপথ অনেকাংশেই ভূগর্ভস্থ, বিশেষ করে চাঁদনি চক, এসপ্ল্যানেড, মহাকরণ, ওয়েলিংটন, পার্কস্ট্রিটের মতো স্টেশনগুলো। এগুলোকেই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অস্থায়ী বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। তবে তার জন্য সরকারকে এগুলো যথাযথভাবে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। কিভাবে? যেমন পানীয় জল, খাবার দাবার, হাওয়া বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা সঙ্গে জরুরী চিকিৎসা পরিষেবা।
কেন মেট্রো স্টেশনগুলোর কথাই বলা হলো? বিশেষজ্ঞেরা এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। কলকাতার মাটির প্রধানত পলিমাটি। আর মেট্রো স্টেশনের ছাদ মাটির প্রায় ৩ থেকে ৫ মিটার গভীরে। সাধারণত বোমা বিস্ফোরণের প্রভাব অত ভেতরে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম। এছাড়া বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হওয়া তাপও মাটির ঐ স্তর ভেদ করে নিচে পৌঁছতে পারবে না। তবে এখানে আরো একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে মেট্রো টানেলের চেয়ে মেট্রো স্টেশনের কাঠামো আশ্রয় নেওয়ার জন্য তুলনামূলক বেশি নিরাপদ।
২) কমিউনিটি সেন্টার : সেকেন্ড অপশনটা হল কলকাতার প্রায় প্রতিটি পাড়ায় অবস্থিত একটি করে ক্লাব বা কমিউনিটি সেন্টার। সেইসব জায়গাকে যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারে মানুষ। তবে জল, খাবার মজুত করার পাশাপাশি ওষুধও রাখা প্রয়োজন তখন ওই কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে। এমনকি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রও করা যেতে পারে পাড়ার কমিউনিটি সেন্টারকে। এগুলো করতে হলে এলাকার বা ওই অঞ্চলের যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। থাকতে হবে প্রাথমিক প্রশিক্ষণও।
৩) সরকারি ভবন স্কুল-কলেজগুলোতে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়স্থল নির্মাণের প্ল্যানিং : স্কুল-কলেজ এবং সরকারি ভবনে অস্থায়ী বা স্থায়ী বাঙ্কার নির্মাণ করা যেতে পারে কিনা সেই বিষয়ে খোঁজখবর করতে হবে আগে থেকে। এসব জায়গায় বড় ভবনের নিচে সুরক্ষিত স্থান তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবে আবারো উল্লেখ করছি, এই পরিকল্পনাগুলো আগেভাগেই সেরে রাখা জরুরি।
৪) সেফ রুম : এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ। প্রত্যেক পরিবারেরই এটা নিয়ে পরিকল্পনা করে রাখা দরকার। অন্তত একটা ঘরকে 'সেফ রুম' হিসেবে তৈরি রাখা উচিত। যেখানে শক্ত দরজা, ফার্স্ট এইড এর জিনিসপত্র, কিছু শুকনো খাবার, পানীয় জল, টর্চ, পাওয়ার ব্যাঙ্ক এসব থাকবে।
সর্বোপরি, যেখানেই থাকুন বা আশ্রয় নিন না কেন, একটা জিনিস হুবহু মেনে চলবেল। আর সেটা হলো সরকার ও সেনাবাহিনীর নির্দেশ। এটা মেনে চলতেই হবে। মনে রাখবেন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সরকার ও প্রতিরক্ষা বিভাগের নির্দেশ মানা। কোথায় যেতে হবে, কোন রুট বন্ধ, কোথায় আশ্রয় দেওয়া হবে এসব তথ্য সরকার সময় মতো জানাবে। বিভ্রান্তিকর বা ভুয়ো খবরে কান না দিয়ে, সরকারি মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করা উচিৎ। আর প্যানিক করবেন না অযথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন