সমকালীন প্রতিবেদন : ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস নিয়োগ মামলায় চিহ্নিত 'অযোগ্য' প্রার্থীদের জোড়া আবেদন শুক্রবার খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন শীর্ষ আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া যে সমস্ত প্রার্থীদের উত্তরপত্রে কারচুপির অভিযোগ সামনে এসেছে, তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনওভাবেই অংশ নিতে পারবেন না। সেইসঙ্গে এপ্রিল মাসের বেতন পাওয়ার যে আর্জি জানান অযোগ্য প্রার্থীরা, তাঁদের সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
উল্লেখ্য, এসএসসি-র ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের সম্পূর্ণ প্যানেল গত ৩ এপ্রিল বাতিল করে দেওয়ার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। শীর্ষ আদালত বলেছিল, কমিশনকে আবার নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। পাশাপাশি, যারা অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত, তাদের বেতনও ফেরত দিতে হবে। তারা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না।
প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক চাকরিহারা কর্মীর মধ্যে প্রায় সাতহাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীকে 'অযোগ্য' হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নবম, দশম এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার আর্জি জানান। তাদের দাবি, সিবিআই এবং এসএসসির কাছে থাকা একই ওএমআর শিটে নম্বর আলাদা। এই যুক্তিতে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। এছাড়া এপ্রিল মাসের বেতন না আটকানোর আর্জিও জানানো হয়।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। এদিন দুটি আবেদনই খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে না। উত্তরপত্রে কারচুপি থাকলে পরীক্ষায় বসতে পারবেন না এই শিক্ষকেরা। পাবেন না বেতনও। আদালতের পর্যবেক্ষণ, মামলার শুনানির সময় তারাও হাজির ছিলেন এবং নিজেদের অযোগ্য নয় বলে সওয়াল করেছিলেন। তাই যারা সংশয়ে ভুগতে চান, তারা নতুন নতুন পথে সংশয়ে ভুগবেন।
চিহ্নিত 'অযোগ্য' চাকরিহারাদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী মুকুল রোহতগী ও করুণা নন্দীরা। তাঁদের দাবি, মূলত চিহ্নিত 'অযোগ্য'দের তালিকায় রয়েছেন তিন ধরনের চাকরিপ্রাপকরা। একদল প্যানেল বহির্ভূতভাবে চাকরি পেয়েছেন, আরেক দল সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তৃতীয়ত যাঁরা মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। এই তিন ধরনের কেউ সুপ্রিম কোর্টের জোড়া মামলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নন।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করে, 'রায় ঘোষণার পরে এখন যোগ্য বা অযোগ্যর কথা কীভাবে বলছেন? সুপ্রিম কোর্টের তরফে এরপর সাফ জানানো হয়, গত ৩ এপ্রিলের রায়ে কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না। তাই 'অযোগ্য' চাকরিহারাদের দু'টি আবেদনই খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে 'অযোগ্য' চাকরিহারারা।
উল্লেখ্য, যাঁরা র্যাঙ্ক জাম্প করে বা মেধাতালিকার ক্রম অনুযায়ী পিছিয়ে থাকার পরেও অন্যদের টপকে চাকরি পেয়েছিলেন, আগের দিন তাঁদের আবেদনও খারিজ করে দেয় বিচারপতি কুমারের বেঞ্চ। মূল মামলাকারীদের আইনজীবী হিসাবে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিমেরা। তাঁরা এদিন জানান, যাঁরা উত্তরপত্রে কারচুপির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন, তাঁরাও ‘দাগি অযোগ্য’দের মধ্যেই পড়েন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন