Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

পরিবারের কারণেই কি হঠাৎ করে অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন কোহলি?

Kohli-decides-to-retire

সমকালীন প্রতিবেদন : জুন মাসে ইংল্যান্ড সফরের আগেই অবসরের ডিসিশন জানিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি। বোর্ড সূত্রে খবর, তারা কোহলিকে নিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছিল। কিন্তু তারপরেও কেন বিরাট নিজের ডিসিশনে অনড় থাকলেন? ক্রীড়া বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, পরিবার একটা বড় কারণ হতে পারে। হয়তো পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চাইছেন কোহলি। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, গত কয়েক বছরে মাঝেমাঝেই বিশ্রাম নিয়েছেন কোহলি। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলেননি। লন্ডনে প্রায়ই দেখা যায় তাঁকে। সেখানে একটা বাড়িও কিনেছেন। জানিয়েছেন, অবসরের পর লন্ডনে পরিবারকে নিয়ে চলে যাবেন। 

তাই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই সন্তানের বাবা কোহলি হয়তো এখন পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে চাইছেন। বুঝতে হবে টি-টোয়েন্টি আগেই ছেড়েছেন। এবার টেস্টও ছাড়লেন। এখন ওয়ান ডে সিরিজ সবচেয়ে কম হয়। মানে, শুধু ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেললে বছরে খুব একটা বেশি সময় কিন্তু মাঠে থাকতে হবে না কোহলিকে। তাহলে কি সেই কারণেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন ভারতীয় এই ব্যাটার? দ্বিতীয় কারণটা হতে পারে রোহিত শর্মা। 

যারা ক্রীড়া জগতের প্রতি আগ্রহী তারা জানবেন, প্রায় একই সময়ে ভারতের হয়ে খেলা শুরু করেছিলেন তাঁরা। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার। মাঠ ও মাঠের বাইরে রোহিত-কোহলির সম্পর্ক বা বন্ডিং বেশ ভাল। একসঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে মাঠে দাঁড়িয়েই নিজের অবসরের কথা জানিয়েছিলেন কোহলি। কিছুক্ষণ পরে সাংবাদিক বৈঠকে গিয়ে রোহিতও অবসরের কথা জানিয়ে দেন। তখন শোনা গিয়েছিল, কোহলির সিদ্ধান্ত দেখে রোহিতও অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। 

এবার কি তাহলে ছবিটা উল্টো? রোহিত আগে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পরেই নিজের অবসরের কথা ভেবে বসলেন কোহলি।‌ এমনটা হল না তো? অনেকেই বলছেন গম্ভীর এর তারকা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসাও একটা কারণ হতে পারে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া সফরের পরেই ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, তাঁর দলকে তারকা-সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দলে কাউকেই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে না। প্রত্যেকে সমান। তার পর থেকে প্রত্যেককে একই টিমবাসে হোটেল ও মাঠে যেতে হচ্ছে। কাউকে ব্যক্তিগত রাঁধুনি নিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। 

গম্ভীরের এই সিদ্ধান্তও কোহলির টেস্ট থেকে অবসরের একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এটা তো ফ্যাক্ট, ভারতীয় দলে রোহিত এবং কোহলি দু’জন সবচেয়ে বড় তারকা। রোহিত চলে যাওয়ায় একা হয়ে যেতেন কোহলি। সেই কারণেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত অস্বাভাবিক কিছু নয়। এক্ষেত্রে শরীরটাও একটা ইম্পর্টেন্ট পার্ট। আমরা সকলেই জানি, কোহলি বিশ্বের অন্যতম ফিট ক্রিকেটার। কিন্তু সেই কোহলিও এখন ধকল নিতে সমস্যায় পড়ছেন। দীর্ঘ সময় ব্যাট করলে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। কখনো দমে সমস্যা হচ্ছে। মাঠে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। 

টেস্টে খেলার ধকল অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাট করতে হয়। আবার টানা ৯০ ওভার ফিল্ডিংও করতে হয়। পাঁচদিনের ক্রিকেট খেলার ধকল সামলানো সহজ নয়। কোহলি এমন নন, যে ফিল্ডিং করার সময় বার বার বিশ্রাম নিতে উঠবেন। আইপিএলের মাঝেই একটি বড় ইনিংস খেলে উঠে কোহলি জানিয়েছিলেন, ৩৭ বছর বয়সে বড় ইনিংস খেলতে কষ্ট হয়। তাই শারীরিক ধকল সামলাতে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়ে হয়তো শুধু মন দিতে চাইছেন একদিনের ক্রিকেটে, এটাও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। 

আর বাকি রইল ব্যর্থতার কথা। ভারতের হয়ে ১২৩টা টেস্ট খেলেছেন কোহলি। করেছেন ৯,২৩০ রান। ৪৬.৮৫ গড়ে রান করেছেন। ৩০টি শতরান ও ৩১টি অর্ধশতরান। এই মানের এক ব্যাটার গত কয়েক বছরে সমস্যায় পড়েছেন। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দিন-রাতের টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতরানের পর থেকে শুরু হয়েছিল দীর্ঘদিনের খরা। তার পরে ৪৪টা টেস্ট ইনিংসে শতরান করতে পারেননি। 

প্রায় চার বছর পরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমেদাবাদে করেছিলেন শতরান। তার পরের ২৯টি ইনিংসেও ছবিটা বিশেষ বদলায়নি। মাত্র দু’টো হান্ড্রেড। ফলে সব কারণের মধ্যে এই পয়েন্টটাও কোথাও থেকে যাচ্ছে। তবে অনেকের মনে আবার এটাও রয়ে গেছে যে, বিরাটকে ওয়ানডে ক্রিকেটের নেতৃত্ব থেকে কিভাবে সরানো হয়েছিল। যেটা হয়তো না হলেই ভালো হতো। কিন্তু তারপরেও বিদায়ী বার্তায় বিরাট তো লিখেছেন, যতটা প্রত্যাশা করেছিলেন, ক্রিকেট তার চেয়ে অনেক বেশি তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে। 

তিনি যে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন সেটা যেমন লিখেছেন, তেমনি টেস্ট ক্রিকেটের স্মৃতি রোমন্থন করলে ভবিষ্যতে ঠোঁটের কোণে যে হাসি থাকবে, সেটাও উল্লেখ করতে ভোলেননি। সত্যিই মাঠের বিরাট অনবদ্য। সাধে তো শচীন বলেননি, বিরাট শুধু রান দেননি। বহু তরুণকে এই খেলায় আসার জন্য উৎসাহিত করেছেন। দিয়েছেন অনেক বেশি কিছু। অথচ সেই বিরাটের এই অবসর, বিশেষ করে রোহিতের পরপরই। এসব দেখে চারিদিকেই বলাবলি, লেখালিখি শুরু হয়েছে যে, ভারতীয় দল এই সবকিছু মিলিয়ে কোথাও একটা পিছিয়ে গেল।‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন