সমকালীন প্রতিবেদন : "গুলেন বেরি" হু হু করে ছড়াচ্ছে? কোথাও মৃত্যু, কোথাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একের পর এক শিশু। কিভাবে বুঝবেন আপনি জিবি সিনড্রোমে আক্রান্ত কিনা? প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার চান্স রয়েছে! সিম্পটম কি? এই রোগ কি ছোঁয়াচে? "গুলেন বেরি" বা জিবিএস একটা স্নায়বিক অসুখ। ফেলে রাখলেই বিপদ। ভয়াবহ পরিণতি এড়াতে কি করবেন? জানেন, কেন হচ্ছে স্নায়ুর এই বিরল রোগ? কারা আক্রান্ত? জানুন এই প্রতিবেদনে।
গুলেন বেরি সিনড্রোম ক্রমেই চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। চিকিৎসকদের অনুমান, ভাইরাস থেকেই হচ্ছে এই রোগ। এটা স্নায়ুর এক বিরল রোগ, যা শরীরকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দিতে পারে কিছুদিনের মধ্যেই। মানে প্যারালাইসিস। এতে স্নায়ু দুর্বল হতে শুরু করে, পেশি অসাড় হয়ে যায়। রোগীর মুখ বেঁকে যেতে পারে, হাঁটাচলা করা বা কথা বলার ক্ষমতা থাকে না অনেক সময়েই। সেই সঙ্গে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। খাবার খেতে পারে না রোগী।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এটা ‘অটোইমিউন ডিজঅর্ডার’, অর্থাৎ যখন নিজের শরীরেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজেরই নার্ভ সিস্টেমকে দুর্বল করতে শুরু করে। না এখনো আন্দাজ নেই এই গুলেন বেরি কতটা সাংঘাতিক বা ভয়ঙ্কর হতে পারে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই রোগে। এমনটাই বলছেন বিশিষ্ট স্নায়ুরোগ চিকিৎসকরা।
এক্ষেত্রে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, রোগীর যদি শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে, তা হলে চিন্তার কারণ আছে। অনেক সময়েই দেখা যায়, রোগীর রেসপিরেটরি প্যারালাইসিস হয়ে গিয়েছে। তখন ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিতেই হবে। সেই সময়ে রোগী কথাও বলতে পারবে না, শ্বাসও নিতে পারবে না। অতএব আন্দাজ করতে পারছেন তো? ভাইরাস থেকে কিভাবে এই রোগে আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অলরেডি গুলেন বেরির বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়ে গেছে মহারাষ্ট্রের পুনেতে। প্রথম মৃত্যু হয়েছে সেখানে। পুনের এক চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ডায়েরিয়ার মতো উপসর্গ ছিল তাঁর। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি গুলেন বেরি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। কয়েকদিন আইসিইউতে থাকার পর, বাইরে বের করা হয়েছিল তাঁকে। এরপরেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ে। সেদিনই মৃত্যু হয় তার।
এখনো অনেকেই পুনেতে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি। কাউকে কাউকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছে। কলকাতাতেও গুলেন বেরির দাপট শুরু হয়েছে। আক্রান্ত একের পর এক শিশু। কিন্তু প্রশ্ন হল কাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার চান্স বেশি? এব্যাপারে চিকিৎসকেরা কি বলছেন, শুনে নেওয়া যাক।
স্নায়ুরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, “কম্পাইলোব্যাক্টর, সাইটোমেগালোভাইরাসের মতো কয়েক রকম ভাইরাসের সংক্রমণে এই রোগ হতে পারে। কোভিডের পরে গুলেন-বেরি সিনড্রোমে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছিল। সাধারণত দেখা যায়, যাঁরা শ্বাসযন্ত্রের কোনও রোগ সারিয়ে উঠছেন বা ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের মতো রোগে ভুগেছেন, তাঁদেরই পরে গিয়ে গুলেন-বেরি সিনড্রোম হয়েছে।”
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে কোনও ওষুধ বা প্রতিষেধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এই রোগ হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, গুলেন-বেরি সিনড্রোম কিন্তু ছোঁয়াচে নয়, অর্থাৎ একজনের থেকে অন্য জনের শরীরে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা নেই। কিন্তু দূষিত জল, খাবার থেকে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আপাতত, বর্তমানে সকলকে বাইরের খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি, জল ভালো করে ফুটিয়ে তারপর খেতে বলা হয়েছে। আচমকা এই রোগ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল, তা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিশেষ টিমও গঠন করা হয়েছে। আর গুলেন-বেরি সিনড্রোম শুরুতেই ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসায় তা সেরে যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে হাতে-পায়ে দুর্বলতা দেখা দিলে, শরীরে অসম্ভব কাঁপুনি অনুভব করলে, স্নায়বিক দুর্বলতা, আস্তে আস্তে হাত-মুখ সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে গিয়ে হাঁটতে অসুবিধা হলে, সংক্রমণ ফুসফুসকে ঘায়েল করার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে, অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার। তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ হয় না। আশ্বাস দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন