Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫

২৬ জানুয়ারি : ভারত ইতিহাসে গুরুত্ব নির্ধারণ

26-January

২৬ জানুয়ারি  : ভারত ইতিহাসে গুরুত্ব নির্ধারণ 

স্বপন ঘোষ

২৬ জানুয়ারি তারিখটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, জাতীয় আন্দোলন, সংবিধান রূপায়ণ এবং স্বাধীনোত্তর ভারতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে একান্ত প্রাসঙ্গিক। পরাধীন ভারতে ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়েছিল। ১৯২৯ এ জওহরলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে ‘পূর্ণস্বরাজ’এর ডাক দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসাবেই ১৯৩০ এর ২৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের ডাকে প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। 

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ব্রিটিশ শাসনে গড়ে ওঠা ‘গণপরিষদ’ বা সংবিধান রচনার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির প্রথম অধিবেশন বসে ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৭। এই অধিবেশনে গণপরিষদের ৩৮৫ জন সদস্যের সিদ্ধান্ত অনুসারে একটি ‘সংবিধান খসড়া কমিটি’ গঠন করা হয় - যার প্রধান হন ড. বি. আর. আম্বেদকর। সংবিধান খসড়া কমিটি প্রায় দু’বছর পরে ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর খসড়া সংবিধান গণপরিষদে পেশ করে। 

পুঙ্খানুপুঙ্খ আলাপ- আলোচনার পর ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধান গণপরিষদ কর্তৃক স্বীকৃত হয়। এর ঠিক দু'দিন পরে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান জাতির উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়। পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ২৬ জানুয়ারি তারিখটির গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ওই দিনটিতেই ভারতীয় সংবিধান আত্মপ্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গণপরিষদের সভাপতি থেকে স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ। 

ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে একটি ‘সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র’ হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং ২৬ জানুয়ারি তারিখটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে সংবিধানের ৪২তম সংশোধনীতে প্রজাতন্ত্র শব্দটি বদলে দিয়ে ‘সাধারণতন্ত্র’ শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে। 

সেই থেকে ভারত একটি ‘সাধারণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ হিসাবে এবং ২৬ জানুয়ারি ‘সাধারণতন্ত্র দিবস’ হিসাবে স্বীকৃত। প্রজাতন্ত্র কথাটির সঙ্গে রাজতন্ত্র কথাটির শব্দগত ও প্রচলনগত সাযুজ্যতার কারণে প্রজাতন্ত্র কথাটি পাল্টে সাধারণতন্ত্র কথাটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে ভারত রাষ্ট্র সর্বসাধারণের। এদেশের সার্বিক জনগণের মতামতের স্বীকৃতিই ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি। 

২৬ জানুয়ারি কেবল একটি তারিখ নয়, এটি কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বাধীনতার প্রতীক। পরাধীনতার গ্লানি মোচনের সোপান। ধনী-নির্ধন, উচ্চ- নীচ, স্বাক্ষর-নিরক্ষর সকল ভারতবাসী এই উপলব্ধিতে আত্মবিশ্বাসী যে, এদেশের সরকার গঠনে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। আমাদের ধর্মপরিচয় দেশের ঐক্য ও স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে না। মানুষ ধর্মের কারণে বিপন্ন বোধ করে না। 

দেশের সংবিধান স্বীকার করে, সকলের আত্মবিকাশের অধিকার এদেশে রয়েছে। আমরা হয়তো সবক্ষেত্রে পূর্ণ সাফল্য পাইনি। কিন্তু শক্তিশালী সংবিধানের কারণেই বহু-ধর্ম, বহু-ভাষা, বহু-সংস্কৃতির এই দেশের মানুষ বিপন্ন নয়, বরং আশাবাদী। কোটি কোটি ভারতবাসীর এই আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হল ২৬ জানুয়ারি। 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন