Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩

বনেদী বাড়ি নাকি সর্বজনীন- কোন পুজো সবথেকে প্রাচীন?

 

Banedi-house-and-universal

সমকালীন প্রতিবেদন : কাকভোরে বাংলার আনাচে কানাচে যখন রেডিওতে বেজে ওঠে সেই পরিচিত কন্ঠস্বর, তখন অজান্তেই ভোরের শিউলি যেন চুপিসারে কানে এসে বলে যায়, মা আসছে। দুর্গাপুজো যেন বাঙালির অনুভূতিতে মিশে রয়েছে সেই পুরাকাল থেকেই। কিন্তু কবে থেকে শুরু হয় এই দুর্গাপুজো? 

ইতিহাসের পাতায় দুর্গাপুজো শুরুর তেমন কোনো তথ্য মেলেনা। তবে বেশ কিছু পৌরাণিক ব্যাখ্যায় মেলে পুজো শুরুর কিছু কাহিনী। জানা যায়, পুরাকালে রাজা সুরথ তার হারিয়ে যাওয়া রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য বসন্তকালে দেবী দুর্গার পুজো করেন। সেইজন্য এই পুজো বাসন্তী পুজো নামেই পরিচিত ছিল। 

অন্যদিকে, কৃত্তিবাসের রামায়ণ অনুসারে শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লঙ্কা সম্রাট রাবনের সাথে যুদ্ধের আগেই ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন। সেই থেকেই শারদীয়া দুর্গাপুজোর প্রচলন বলেই অনেকে মনে করেন। 

এদিকে, কলকাতার ইতিহাসেও বেশ কিছু প্রাচীন পুজোর গল্প শোনা যায়। অনেকের দাবি, কলকাতা শহরে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। প্রাচীন এই পুজোটি এখনো হয়। তবে রায়চৌধুরী পরিবার ৭ টি ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ৭ জায়গায় হয় এই পুজো। 

অন্যদিকে, ব্রিটিশ রাজত্বকালে শোভাবাজার রাজবাড়ীতে একটি পুজোর আয়োজন করেন মহারাজ রাধাকান্ত দেব। যদিও এই পুজোয় ব্রিটিশদের নিয়ে মাতামাতি ছিল বেশি, আমজনতার প্রবেশাধিকার ছিল না। সেই দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে রানী রাসমণি তার জানবাজারের বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। 

সেই পুজো ছিল আলাদা। সেই পুজো ছিল সাধারণ মানুষের প্রবেশযোগ্য। জানা যায়, তারপর থেকেই একটু একটু করে বিভিন্ন পরিবারে পারিবারিক দুর্গোৎসবের প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে যেমন কলকাতার অনেক বাড়িতেই পুজো হয়, তেমনই আজকাল সর্বজনীন পুজোগুলিও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। 

আবার সর্বজনীন পুজোর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভবানীপুরে একটি সনাতন গোষ্ঠীর উদ্যোগে প্রথম বারোয়ারী দূর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। এই পুজোটি এখনো হয়ে থাকে। এরপরই শ্যামবাজারকে কেন্দ্র করে একাধিক দুর্গাপুজোর পত্তন হয়েছিল।

পুজোর এই দিনগুলিতে বরাবরই গোটা বাংলা থাকে উৎসবমুখর। বাঙালির পুজো শুরু হয় মহালয়া থেকেই। দেবীপক্ষের সূচনার ভোরে বাঙালির ঘরে ঘরে বেজে ওঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে কালজয়ী 'মহিষাসুরমর্দিনী'। এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান পর্ব সম্পন্ন হয়। 

তবে পুজোর উপাচার শুরু হয় ষষ্ঠীর সন্ধ্যায়, বেলগাছের নীচে দেবীর বরণের মাধ্যমে। পরদিন মহাসপ্তমীর সকালে 'কলা বউ স্নান' এক বিশেষ পর্ব। তবে মহাঅষ্টমীর 'কুমারী পুজো'র মাধ্যমে বাঙালি আজও নারীর প্রতি সম্মান প্রদানের রীতিকে সচল রেখেছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তারপর হয় 'সন্ধিপুজো'। 

সন্ধিপুজোর বিশেষ মুহূর্তে কোথাও যেমন 'বলিপ্রথা' আজও চালু রয়েছে, কোথাও আবার তোপধ্বনি শোনা যায়। মহানবমীর পুজো শেষেই আসে মায়ের বিদায়বেলা। তবে দশমীর এই কষ্ট যেন কিছুটা হলেও ঢেকে দেয় বিজয়ার আনন্দকে। তাই হয়তো বাঙালি এই দুঃখ ভুলতে বিসর্জনেও বলে ওঠে 'আসছে বছর আবার হবে'। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন