Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

রোগ সারাতে 'মৃত সাগর' এ ভেসে বেড়ায় মানুষ

 

Dead-sea

সম্পদ দে : ডেড সি অথবা মৃত সাগর, নামে পরিচিত স্থানটি মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়। বহু শতাব্দী ধরে মানুষ এর অবাক করা বৈশিষ্ট্য দেখে মুগ্ধ হয়ে আসছে। ডেড সি, পৃথিবীতে অবস্থিত সমুদ্রতল থেকে সর্বনিম্ন জলাশয় পৃষ্ঠ হিসেবে বিখ্যাত। 

আসলে মহাসাগর হিসেবে পরিচিত হলেও এটি একটি বিশাল হ্রদ, যা পূর্ব দিকে জর্ডান এবং পশ্চিমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সীমানার সাথে মিলিত হয়। মৃত সাগরে অবিশ্বাস্যভাবে উচ্চ লবণের পরিমাণের কারণে কোনোও সামুদ্রিক প্রাণীর বেঁচে থাকা এবং বেড়ে ওঠা এখানে সম্ভব নয়।

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, মৃত সাগরের জলে ৩৪ শতাংশ দ্রবীভূত লবণ রয়েছে, যা সমুদ্রের জলের চেয়ে প্রায় ৮.৬ গুণ বেশি। লবণের এই উচ্চ ঘনত্ব এই হ্রদের জলকে অবিশ্বাস্যভাবে অনেক ঘন করে তোলে। মৃত সাগরের জলের ঘনত্ব ১.২৪ কেজি/লিটার। 

ঠিক এই কারণেই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী জলের একটিতে পরিণত হয়েছে। ফলে, কেউ নিজেকে এই জলে নিমজ্জিত করার যতই চেষ্টা করুক না কেন, তারা প্রতিবার জলের অতি প্লবতার কারণে এর উপরের পৃষ্ঠে ভাসতে থাকবে। আজ এই বিশেষত্বটির কারণেই মৃত সাগর,এমন একটি জায়গা হিসাবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে যেখানে লোকেরা কখনই ডোবে না।

বিখ্যাত এই মৃত সাগরের গঠনের পিছনে লক্ষ লক্ষ বছর আগের ঘটনা লুকিয়ে আছে। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, এখন থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ বছর আগে, এলাকাটি বারবার লোহিত সাগরের জলে প্লাবিত হয়েছিল, এবং এর মাধ্যমে এখানে একটি সরু উপসাগর তৈরি হয়। উপসাগরটি লোহিত সাগরের সাথে জেজারেল উপত্যকার একটি প্রণালী দ্বারা সংযুক্ত ছিল।

সময়ের সাথে সাথে উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী ভূমি যথেষ্ট উচ্চতা অর্জন করে এবং সমুদ্রের প্লাবন দ্বারা এই অঞ্চলে তৈরি উপসাগরটি একটি হ্রদে পরিণত হয়। তবে মৃত সাগরের জলে লবণের মাত্রা সাধারণের থেকে অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও এই জলে এমন আরো বেশ কিছু পদার্থ আছে যা কিনা শুধুমাত্র অনন্য নয়, মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারীও বটে।  

মৃত সাগরের লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাসিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। এই খনিজ পদার্থগুলির উপস্থিতি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারি প্রমাণিত হয়েছে এবং অনেক মানুষই এই জলের নিরাময় বৈশিষ্ট্যগুলির অনুভব করতে মৃত সাগরে ছুটে আসেন।

তবে বিভিন্ন প্রকার অনন্য গুণাবলী সত্ত্বেও, মৃত সাগর  কিন্তু কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়। যদিও এর জলে ডুবে যাওয়া অসম্ভব, তবে যারা সাঁতার জানেন না তাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভয়ে খুব বেশি জল পান করে ফেললে ভীষন পরিমাণে বমি হতে পারে, এমনকি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনও হয়ে যেতে পারে। উপরন্তু, জলে থাকা উচ্চ লবণের উপাদান চোখ এবং শরীরের অন্যান্য সংবেদনশীল এলাকা গুলোতে প্রবল জ্বালার সৃষ্টি করতে পারে।

প্রাকৃতিক বিস্ময় হিসাবে মৃত সাগরের মর্যাদা বিশ্বজুড়ে দর্শকদের আকর্ষণ করেছে। যেখানে প্রচুর মানুষ দূর দূরান্ত থেকে এর থেরাপিউটিক সুবিধাগুলি অনুভব করতে আসে, সেখানে আবার অনেকেই কেবল এর অনন্য বৈশিষ্ট্য দ্বারা মুগ্ধ হয়। মৃত সাগরের ভঙ্গুর ইকোসিস্টেম রক্ষা ও সংরক্ষণ করার জন্যেও সমানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ এই অতি লবণাক্ত হ্রদটি কেবলমাত্র পর্যটকদের জন্য নয়, এখানকার স্থানীয় অঞ্চলের জন্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ।

সবশেষে আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, 'মৃত সাগর' বা 'ডেড সি' একটি প্রাকৃতিক আশ্চর্য যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষকে তার অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়ে মোহিত করেছে। এর উচ্চ লবণের উপাদান এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী জলের মধ্যে একটি করে তোলে। 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন