সমকালীন প্রতিবেদন : উত্তর ২৪ পরগনার মৃতপ্রায় নদীগুলোর সংস্কারের দাবিতে এবং আসন্ন সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করল সারা ভারত কৃষক সভার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি। "ইছামতিকে ইচ্ছেমতো বইতে দাও" — এই প্রেরণাদায়ক স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমী পদযাত্রা, যার সূচনা হয়েছে বনগাঁ থেকে এবং শেষ হবে বারাসতে।
শনিবার সকালে বনগাঁর ত্রিকোণ পার্ক থেকে এই পদযাত্রার সূচনা হয়। কৃষক সভার নেতৃবৃন্দ, কর্মী এবং সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নদী বাঁচানোর এই আন্দোলন যেন রূপ পায় এক গণআন্দোলনের। পদযাত্রার প্রথম পর্ব দুপুরে শেষ হয় দোগাছিয়া অঞ্চলে। এরপর বিকেলে আবার দোগাছিয়া থেকে বারাসতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়, যা শেষ হবে আগামী ৩০ জুন বারাসতে এক সমাপ্তি সমাবেশের মাধ্যমে।
কৃষক সভার নেতাদের দাবি, ইছামতি নদী সহ জেলার বহু নদী, খাল ও বিল আজ অবহেলা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে মৃতপ্রায়। জমে থাকা পলিমাটি, অপরিকল্পিত বাঁধ, জলপথে দখলদারিত্ব ও দূষণের কারণে এই নদীগুলি আজ কার্যত জলশূন্য। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও মৎস্যজীবীরা — যারা নদী নির্ভর জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুক্ত। জলসেচের অভাব, মাছচাষে প্রতিবন্ধকতা, ফসলের ক্ষতি— সব মিলিয়ে এই অব্যবস্থার পরিণতিতে গ্রামীণ অর্থনীতি ধসে পড়ছে।
কৃষক সভার পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, অবিলম্বে নদী খনন, বাঁধ সংস্কার, নদী পথ পরিষ্কার এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। একইসঙ্গে সরকারি নীতির দুর্বলতা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে পদযাত্রার মাধ্যমে।
পদযাত্রাটি শুধু নদী সংস্কারের দাবি নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আসন্ন ৯ জুলাইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনও। কৃষক সভার নেতৃত্ব মনে করেন, কৃষি, মৎস্য, শ্রম এবং পরিবেশ-সবকিছুর সুরক্ষায় সরকারের যে ব্যর্থতা, তার প্রতিবাদেই এই যৌথ কর্মসূচি প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী।
তাঁরা জানিয়েছেন, এই আন্দোলন শুধু একদিনের কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের অংশ। বারাসতে সমাপ্তি সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এই ধরনের আন্দোলন উত্তর ২৪ পরগনার কৃষিপ্রধান অঞ্চলের বাস্তব সমস্যাগুলিকে প্রকাশ্যে তুলে আনছে। একইসঙ্গে পরিবেশ, নদী ও কৃষির টেকসই ভবিষ্যতের স্বার্থে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করাও এই পদযাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য। স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশ সচেতন মহল এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন