Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩

বিশ্বভারতী হেরিটেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা পেতে চলেছে

 

VisvaBharati-Heritage-University

সম্পদ দে : ‌বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের মধ্যে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যাকে নিয়ে আমরা প্রত্যেকেই গর্ববোধ করে থাকি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে নামকরণ করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর এবারে সারা বিশ্বের মধ্যে আর এক রেকর্ড সৃষ্টি করতে চলেছে বিশ্বভারতী। 

ইউনেস্কোর দ্বারা 'হেরিটেজ' তকমা পেতে চলেছে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। একবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলে, এটিই বিশ্বের প্রথম ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে, যা 'হেরিটেজ' তকমা পাবে এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক সৃষ্টি করবে।

১৯২১ সালে একটি বিস্তৃত ১১৩০ একর ক্যাম্পাস জুড়ে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২২ সালের মে মাসে বিশ্বভারতী সোসাইটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামটিকেই ধরে রেখেছিল। সেই সময়কালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উদারভাবে নিজের জমি এবং একটি বাংলো সহ বেশ কিছু সম্পত্তি দান করেছিলেন। 

প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫১ সালে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার পরে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ঠাকুরদা ক্ষীতিমোহন সেন এই দায়িত্ব সামলান।

বিশ্বভারতী একটি মুক্ত চিন্তাধারার ওপরে তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই মুক্তচিন্তাধারার ওপরে তৈরি বিশ্ববিদ্যালয় আজও তার নীতিগুলিকে সমর্থন করে চলেছে। সাংস্কৃতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে উৎসাহিত করার অনন্য ব্যবস্থা এটিকে বিশ্বব্যাপী একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলাদা করে তুলেছে।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিশেষায়িত ভবন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হিন্দি শেখার ইনস্টিটিউটের জন্য হিন্দি ভবন, চীন-এশিয়ান স্টাডিজের জন্য চীন ভবন, মানবিক কেন্দ্রের জন্য বিদ্যা ভবন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের জন্য কলা ভবন এবং সঙ্গীতের জন্য সঙ্গীত ভবন।

২০১০ সালে কবিগুরুর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকীর সঙ্গে মিল রেখে বিশ্বভারতীর জন্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল৷ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের উপদেষ্টা সংস্থা ICOMOS অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস এন্ড সাইট্স-এর সুপারিশে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় বিশ্বভারতীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে।

এই উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের খবরটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি রবীন্দ্র জয়ন্তীতে সবার সামনে উন্মোচন করেছিলেন। বিশ্ব মঞ্চে ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সফল উপস্থাপনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বকে কৃতিত্বও দিয়েছেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের রিয়াদে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির বৈঠকের সময়তেই বিশ্বভারতীর হেরিটেজ তকমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর বিদ্যুত চক্রবর্তী আসন্ন স্বীকৃতিতে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বভারতীর আসন্ন ঘোষণাকে বিশ্বের প্রথম হেরিটেজ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এপ্রিল বা মে মাসের মধ্যে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পাওনাটিকে কোনওমতেই সাধারণভাবে দেখা যাবে না। কারণ, ইউনেস্কো সাধারণত স্মৃতিস্তম্ভকেই হেরিটেজ সাইট হিসেবে মনোনীত করে। বিশ্বভারতী গোটা বিশ্বের মধ্যে প্রথম এমন বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে ইউনেস্কোর তরফ থেকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হবে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় অবস্থা এবং খোলা আকাশের নীচে শিক্ষার প্রতিশ্রুতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পুরোপুরি সারিবদ্ধ, যা প্রতিটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ঐতিহ্যের স্বীকৃতি ভারতের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং শিক্ষার জগতে এর অমূল্য অবদানের একটি প্রমাণ হিসাবে কাজ করছে। সমগ্র দেশবাসী বর্তমানে গর্বিত বোধ করছে, কারণ আমাদের প্রিয় এই বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহ্যের এক মশাল বাহক হিসাবে আবির্ভূত হয়ে উঠেছে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন