Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩

গাইডের কাজ করে উপার্জন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের

 

Guiding-work-is-for-women

সম্পদ দে : ‌আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি জেলা পুরুলিয়া। বর্তমান সময়ে রাজ্যের একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই জেলা। পুরুলিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে 'পাখিপাহাড়' বা 'বার্ড হিল'।

তবে বর্তমান সময়ে পুরুলিয়ার এই পর্যটন কেন্দ্রের মুকুটে এক নতুন পালক হিসেবে সংযোজন হয়েছে ৪১ জন মহিলা গাইডের একটি দলের। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের মাঠা বন এলাকার ৪১ জন মহিলা গাইডের একটি দল সমস্ত পর্যটকদেরকে চমৎকার ট্যুরিস্ট গাইডেন্স পরিষেবা প্রদান করে বেশ চমকে দিচ্ছেন।

পুরুলিয়ায় অবস্থিত চারটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এই মহিলারা বন রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং গাইড হিসাবেও নিজেরাই দাঁড়িয়েছেন। বেদবতী, মা মনসা, অন্নপূর্ণা এবং হিল এরিয়া উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন নামে এই চারটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এই ৪১ জন মহিলা এখন পাখি পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম ভরসা।

গত প্রায় ৫ মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন এই মহিলারা। বিস্তীর্ণ জঙ্গল পরিষ্কার থেকে শুরু করে, তাদের তত্ত্বাবধানে যাতে পর্যটকরা একটি দুর্দান্ত সময় কাটাতে পারেন, সেই সব দিকে খেয়াল রাখছেন তারা।

আগে পুরুলিয়ার কোনও পর্যটন কেন্দ্রেই গাইড ছিল না। পর্যটকরা নিজেদের পছন্দ মতো ঘুরে বেড়াতেন। তবে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই গাইড সিস্টেমের পরিধি জেলার পর্যটনকে বেশ প্রসারিত করেছে। এখানকার মহিলারা এই পর্যটন কেন্দ্রে গাইড ব্যবস্থার ব্যাপ্তির পুরো সুবিধা নিয়েছেন।  

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এই মহিলারা দেখিয়েছেন যে, পুরুষরা যে কাজটি করতে পারে, নারীরাও তা করে দেখাতে পারে। বন রক্ষা এবং গাইড হিসাবে এই মহিলারা পালাক্রমে কাজ করছেন।  তাদের মধ্যে অন্তত ৭ জন দৈনিক গাইড হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু বেশি পর্যটক এলে কখনো ১০ জন অথবা ২০ জন নারী একসঙ্গে কাজ করেন। 

দিনের শেষে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদকদের হাতে উপার্জিত সম্পূর্ণ টাকা জমা করা হয়। সাত দিন পরে সেগুলি গণনা করা হয়। গাইড হিসেবে কাজ করা এই মহিলাদের বেতন বেশ কম। পর্যটকদের গাড়ি প্রতি মাত্র ১০০ টাকা করে আয় হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও তারা তাদের কাজ নিয়ে খুশি। 

পার্বত্য এলাকার মহিলা সমিতির বাসন্তী মাহাতোর কথায়, '‌সপ্তাহ শেষে অন্তত ২০০-৩০০ টাকা হাতে আসে। এক সপ্তাহের নুন, তেল, মশলার খরচ উঠে যায় এই টাকায়। তাই এইটুকু কেনাকাটা করার জন্য বাড়ির কারোর কাছে কিছু বলার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া গাইড হিসেবে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর লোকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই, যেটা আমার খুব ভালো লাগে।'‌ 

এই মহিলারা অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলে পর্যটকদেরকে নিয়ে যান। তাদেরকে চারিদিকে ঘোরাতে ঘোরাতে সবকিছু বুঝিয়ে দেন। গাইড হিসেবে তারা ইতিমধ্যেই বেশ ভালো কাজ করছেন। যদিও তারা এখনো মনে করেন যে, তাদের আরও ভাল গাইড হতে হবে, এবং তারজন্য তাদের ভালো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।

বেদবতী মহিলা সমিতির সদস্য এবং গাইড রীমা মাহাতো বলেন, '‌আমরা নিজেরাই গাইডের কাজ করে করে তা শিখেছি। পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে সবকিছু ব্যাখ্যা করতে হয়, তা আমরা আলাদা করে শিখিনি। তবে আমাদের আরো ভালোভাবে কাজ করার জন্য ও আরো পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করার জন্য ভাল প্রশিক্ষণ দরকার। সেজন্যই আমরা বাঘমুন্ডি পঞ্চায়েত সমিতির কাছে এই সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদন জমা করেছি।'‌

বন রক্ষা এবং গাইডের কাজে নিযুক্ত এই ৪১ জন মহিলা গাইডের অত্যন্ত প্রশংসা করেছে পুরুলিয়ার বন বিভাগ। এই মহিলারা এখন পুরুলিয়া জেলা তথা গোটা রাজ্য এমনকি দেশের কাছে এক অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের করা কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং তাদের কাজের প্রতিশ্রুতি সত্যিই বর্তমান সময়ে অনেকের কাছেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখার গল্প হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে।



‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন