Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩

পুলিশ অফিস রক্ষা করে সচেতন নাগরিকের পুরস্কার

 

Protect-the-police-office

শম্পা গুপ্ত : ‌প্রতিদিনের অভ্যাসমতো দিন কয়েক আগের এক ভোরে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন পুরুলিয়া শহরের ওল্ড পুলিশ লাইনের পুলিশ কোয়ার্টারের বাসিন্দা বন্দনা মান। তবে সেদিন ভোর ছিল তাঁর কাছে অন্যরকম। সেদিন তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি এবং সাহসিকতার কারণে রক্ষা পেয়েছিল পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। প্রাণে বেঁচেছিলেন পুলিশকর্মীরা।

সেই ভোরে নিজের বাসস্থান থেকে সাহেব বাঁধের দিকে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন বন্দনাদেবী। সেইসময় হঠাৎ করেই তিনি লক্ষ করেন, রাস্তার ধারে থাকা ডিআইবির দপ্তরের একটি অংশ থেকে হালকা ধোঁয়া বের হচ্ছে। পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টরের স্ত্রী হিসেবে তিনি জানেন, ডিআইবি দপ্তরের গুরুত্ব। 

আর সেই গুরুত্বকে উপলব্ধি করে এতটুকুও সময় নষ্ট না করে তৎক্ষণাৎ দপ্তরের সেন্ট্রিকে ধোঁয়া বের হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ করেন বন্দনাদেবী। পাশাপাশি, নিজের মোবাইল ফোন থেকে সটান ফোন করেন নিজের স্বামী, পুরুলিয়া সদর থানার সেকেন্ড অফিসার গোপাল মানকে। 

এখানেই শেষ নয়, এরপর তিনি প্রায় ছুটতে ছুটতে এক কিলোমিটার দূরে থাকা দমকলের দপ্তরেও পৌঁছে যান। দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে গিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য দেন। সঙ্গে সঙ্গে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। 

ততক্ষণে অবশ্য আগুন অনেকটাই বেড়ে গেছে। তবে বন্দনাদেবীর তৎপরতায় আসন্ন বিপদ সম্পর্কে দপ্তরের ভেতরে থাকা পুলিশ বিভাগের কর্মীরা জানতে পারায় তাঁরা সময়মতো নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সক্ষম হন। এরপর দমকলের আরও একটি ইঞ্জিন এসে প্রায় চল্লিশ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।    

সেদিন আর প্রাতঃভ্রমণ হয়নি বন্দনাদেবীর। একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত বোধ করেন তিনি। সেদিন বন্দনাদেবীর জন্য শুধু ক্ষয়ক্ষতিই কম হয়নি, জীবন পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছিল বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীর।

আর এমন একটি কর্মকান্ডের জন্য একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সোমবার পুরুলিয়া সদর থানায় বন্দনাদেবীর হাতে স্মারক এবং শংসাপত্র তুলে দেওয়া হল। উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার ডিএসপি আশীষকুমার রায়, থানার আইসি মানস সরকার সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকেরা। 

পুলিশ কর্মীদের বক্তব্য, কাজের প্রয়োজনে ডিআইবি দপ্তরে অনেকেই রাতে থেকে যান। ভোরের দিকে গভীর ঘুমেও থাকেন অনেকে। আগুন ছড়িয়ে গেলে তার ধোঁয়াতেও দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বন্দনাদেবীর দায়িত্ববোধ অনেক ক্ষতির হাত থেকেই রক্ষা করেছিল। সম্মান পেয়ে খুশি বন্দনাদেবীও।

শুধু বন্দনাদেবী নন, এদিন আরও কয়েকজনকে সম্মানিত করা হয়। তারমধ্যে রয়েছেন মহিলা কনস্টেবল ফারহাৎ জাহান খাতুন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারী হুটমুড়াতে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেখানেই কর্তব্যরত ছিলেন ফারহাৎ। সভার পর উপস্থিত জনতা বাড়ি ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো করতে থাকে। 

এই পরিস্থিতিতে জাতীয় সড়কে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড ভিড় হয়ে যায়। এরইমধ্যে একটি ১০ বছরের নাবালিকা ভিড়ের চাপ সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়। পদপিষ্ট হবার মত অবস্থা তৈরি হয়। আর এই অবস্থায় দুই কন্যা সন্তানের জননী ওই মহিলা কনস্টেবল ফারহাৎ রীতিমতো ঝাপিয়ে পরেন। সেখান থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে তাকে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন ফারহাৎ। ওই একই দিনে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ দায়িত্ব পালন করে পুরস্কৃত হলেন সিভিক ভলান্টিয়ার নাড়ুগোপাল রুহিদাস। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন