Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩

খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চা দূর করবে ফ্যাটিলিভার

 

Exercise-will-eliminate-fatty-liver

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌বর্তমান জীবনযাত্রায় অনিয়মিত জীবন-যাপনের কারণে একের পর এক রোগের প্রকোপ লেগেই আছে প্রতিটি মানুষের। সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ আজকাল খুব কমই পাওয়া যায়। পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, প্রত্যেকেরই শরীরে কিছু না কিছু রোগব্যাধি বাসা বেধেছে। আর সেই রোগ ব্যাধির মধ্যেই একটি অত্যন্ত পরিচিত রোগ ফ্যাটিলিভার।

বর্তমানে প্রত্যেকের জীবনে সময় পাল্টানোর সাথে সাথে সমস্ত কিছুরই আধুনিকীকরণ হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে এই আধুনিক জীবন যাপনের কারণে পাল্টে যাচ্ছে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মান। তবে এই পাল্টে যাওয়া অভ্যাস ডেকে আনছে এক বিপদ। আধুনিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন যাপনের কারণে ফ্যাটিলিভার খুবই প্রচলিত একটি রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী ফ্যাটিলিভার প্রধানত দুই প্রকার। ১– অ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভার এবং ২– নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভার। নাম দেখেই যথেষ্ট সহজে বোঝা যাচ্ছে যে, এই দুই রকম ফ্যাটিলিভারের পেছনে কি কি কারণ থাকতে পারে। নাম অনুযায়ী অ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভারের কারণ অত্যন্ত পরিমাণে মদ্যপান। আর নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভারের পিছনে থাকে অনিয়মিত জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর এবং  বেশি তেল মশলাযুক্ত খাবার। 

বর্তমানে ফ্যাটিলিভার খুবই প্রচলিত একটি রোগ হয়ে থাকলেও একে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না কোনওমতেই। ফ্যাটিলিভার হওয়ার পর তার যত্ন না নিলে, দিনের পর দিন এর প্রকোপ বাড়তে বাড়তে একসময় এক মারাত্মক রোগে পরিণত হতে পারে এটি। 

আর এই ফ্যাটিলিভারের প্রকোপ থেকে বাঁচতে গেলে অন্যান্য সমস্ত কিছুর আগে দুটি জরুরী কাজ অবশ্যই করতে হবে। প্রথমত, মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, নিজেদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে গেলে কি ধরনের খাবার রাখতে হবে নিজেদের তালিকায়? ভাবতে হবে না, কাউকে যাতে এব্যাপারে চিন্তা করতে না হয়, সেই জন্যই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে দিয়েছেন এমন কয়েকটি খাবারের নাম, যা কিনা খাদ্য তালিকায় রাখলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে ফ্যাটিলিভারের মতো মারাত্মক রোগকে। 

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞদের বলে দেওয়া সেই খাবারগুলি, যা নিয়ম করে রাখতে হবে নিজেদের খাদ্য তালিকায়।

১| রসুন— স্বাস্থ্যের উপকারিতায় রসুনের দেখা পাওয়া যায় না এমন খুব কমই হয়। রসুন এমন এক সবজি, যা কিনা ফ্যাটিলিভারের সমস্যার সঙ্গে শরীরের ওজন কমাতেও অত্যন্ত উপকারী। দিনের শুরুটা খালি পেটে একটি আস্ত রসুনের কোয়া দিয়ে করতে পারলে ফ্যাটিলিভার নিয়ে আর ভাবতে হবে না।

২| ওটস— অনেকেরই প্রতিদিনের ব্রেকফাস্ট হিসেবে ওটস অত্যন্ত পছন্দের একটি খাবার। এতে থাকে ভরপুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, যা কিনা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে অত্যন্ত লো ফ্যাট থাকায় শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেয় না একদমই। যাদের অত্যন্ত ঘনঘন খিদে পায়, তাদের জন্য ওটস একটি যথাযথ খাবার। কারণ, এটি খেলে অনেকক্ষণ ধরে পেট ভর্তি থাকে। ফলে ঘনঘন খিদে পায় না।

৩| শাকসবজি— ফ্যাটিলিভার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে খাওয়া দাওয়াও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পুষ্টিবিদদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শুরু করতে হবে ডায়েট। ডায়েটে রাখতে হবে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, যা কিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। শাকসবজির মধ্যে শীতকালীন শাকসবজি শরীর এবং লিভারের জন্য বেশ কার্যকরী। এর মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, পালং শাক, ব্রকলি, লেটুস ইত্যাদি।

৪| ফল— কেবলমাত্র লিভারের জন্য নয়, গোটা শরীরের স্বাস্থ্যের জন্যই ফল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আঙুর, ব্লুবেরি, কমলালেবুর মতো ফল অবশ্যই প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন। যেখানে কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন সি লিভারে চর্বি জমতে দেয় না, সেইখানেই আঙুর ও ব্লুবেরির মতো ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, যাদের লিভারে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ব্লুবেরির নির্যাস এবং আঙুরের বীজের নির্যাস লিভারের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে অনেকটাই আটকে দেয়।

৫| অ্যাভোকাডো— অ্যাভোকাডো এমন একটি ফল, যা কিনা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের খুবই ভালো একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই সঙ্গে অ্যাভোকাডোতে থাকে অসম্পৃক্ত চর্বি। ফলে, এটি খেলে ফ্যাটিলিভারের সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায় এবং সেইসঙ্গে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত লিভারেরও মেরামত করতে পারে এই ফল।

খাদ্য তালিকায় এই পাঁচটি খাবার ছিল ফ্যাটিলিভারের জন্য ব্রহ্মাস্ত্রের সমান। প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় এই পাঁচটি খাবার রাখতে পারলেই ফ্যাটিলিভারের সমস্যা থেকে অনেকটাই চিন্তামুক্ত হওয়া সম্ভব। তবে কেবলমাত্র খাদ্যাভাসেই পরিবর্তন আনলে হবে না। একটি সম্পূর্ণ সুস্থ লিভার, সর্বোপরি একটি সুস্থ শরীর বজি‌য়ে রাখতে গেলে নিয়মিত অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটুন এবং শরীরচর্চা করুন। তাহলেই শরীর সুস্থ থাকবে, আর শরীর সুস্থ থাকলে লিভার, হার্ট এবং সেইসঙ্গে মনও সুস্থ থাকবে।

তাহলে আর দেরি করে লাভ নেই। আজ থেকেই পরিবর্তন করে ফেলুন নিজেদের খাদ্যাভ্যাস। সঙ্গে থাকুক নিয়মিত শরীরচর্চা। এই বিধি মেনে চলতে পারলেই আপনারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন নিজেদের ফ্যাটিলিভারের সমস্যা। আর যাদের ফ্যাটিলিভারের সমস্যা নেই, তারাও এই পদ্ধতিতে আগাম পরিচর্যা করতে পারবেন নিজেদের শরীরের।




‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন