সমকালীন প্রতিবেদন : প্রতিবছরই শীতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিযায়ী পাখি উড়ে আসে শীতের অতিথি হয়ে। লক্ষ লক্ষ পাখি কয়েক হাজার কিলোমিটার একটানা উড়ে আসে খাবারের খোঁজে এবং বংশবিস্তারের জন্যে।
এবছরের শীতেও কালনা শহর লাগোয়া জেলখানার কাছে ভাগীরথীর চরে দেখা মিলছে বিভিন্ন রং-বেরঙের পরিযায়ী পাখির। এর মধ্যে আছে বেশকিছু লুপ্তপ্রায় এমন পাখি, যা কিনা আজকাল সহজে চোখে পড়ে না। বনদপ্তর এই সমস্ত লুপ্তপ্রায় পাখিগুলিকে চিহ্নিত করার এবং সেইসঙ্গে মোট কত পরিযায়ী পাখি এই এলাকায় এসেছে, সেটি গণনা করার উদ্যোগ নিয়েছে।
পূর্বস্থলীর চুপিতে কাটোয়া শহরের রেঞ্জ অফিসারের নেতৃত্বে, ১৫ জন সদস্যের একটি দল নৌকোয় করে দুদিন ধরে পরিযায়ী পাখিগুলিকে চিহ্নিত করা এবং তাদের গণনা করার কাজ চালিয়ে গেছেন। গণনার শেষে তাঁরা প্রায় ১১ হাজারেরও বেশি পাখির সন্ধান পান। যার মধ্যে কিনা প্রায় ৬০ রকমের প্রজাতির পাখি রয়েছে।
এবছর শীতে চুপির চরে বেশ কিছু নতুন প্রজাতির পাখির হদিস মিলেছে। যাদের মধ্যে আছে প্রিনিয়া, ব্ল্যাক উইন স্টিল, ইস্টার্ন মার্স, হেরিয়ারের মতো নতুন প্রজাতি। কালনাতে এবছরের শীতে প্রথমবার কালনা কোর্ট লাগোয়া জলাশয়ে, সেই সঙ্গে তার আশপাশকার চাষের জমিতে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখির আনাগোনা শুরু হয়েছে।
এবছর প্রথমবার কালনাতে বিভিন্ন রং-বেরঙের বিলুপ্তপ্রায় পরিযায়ী পাখি দেখতে পাওয়ায় এদের সুরক্ষার জন্য বনদপ্তর কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। রেঞ্জ অফিসার জানিয়েছেন, একটি খসড়া হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১১ হাজারের বেশি পরিযায়ী পাখির আগমন হয়েছে এখানে।
যেহেতু পাখির সংখ্যা প্রচুর, সেই জন্য চোরাশিকারীদের ভয়ও থেকে যায়। সেই জন্যই কাটোয়ার রেঞ্জ অফিসার শিবপ্রসাদ সিংহের নেতৃত্বাধীন দল অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, বাইনোকুলার এবং উন্নতমানের ক্যামেরা নিয়ে পাখি গণনা এবং তাদের সুরক্ষার কাজে লেগে পড়েন।
কালনা কোর্ট চত্বর লাগোয়া জলাশয়ে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে 'লিজার হুইসলিং ডাক' প্রজাতির পাখির সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির সাইবেরিয়ান পাখি, অস্ট্রেলিয়ান পাখি এবং কিংফিশারের দেখাও মিলছে। জলাশয় সংলগ্ন এলাকায় স্বচ্ছ জলের ভেতরে থাকা শামুক, গুগলি, বিভিন্ন প্রকার ছোটখাটো মাছ এবং পোকা খেয়ে বেশ সহজেই খিদে মেটাতে পারে এই ভিনদেশী পাখিগুলি।
বিশাল সংখ্যক পরিযায়ী পাখির আগমনে নতুন করে এক কাজ পেয়েছেন এখানকার মাঝিরা। নিজেদের নৌকায় করে এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদেরকে এই বিশাল জলাশয় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাখির দর্শন করাচ্ছেন তাঁরা। পাখির কারণে হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করছে পর্যটক এবং বার্ড ফটোগ্রাফারদের সংখ্যা। সেইসঙ্গে এই এলাকায় চাষবাসের প্রভাবও অনেকটা বেশি বলে চিন্তায় রয়েছেন বনদপ্তরের কর্মীরা। তাঁদের চিন্তা, এ বছর প্রচুর পরিমাণে পাখি আসলেও মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সামনের বছরে ঠিক কত পাখি এখানে আসবে, তা বলা সম্ভব নয়।
এই শীতে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিরাও আর বেশিদিন এখানে থাকবে না। এই বছর শীতকাল কেটে গেছে অনেক তাড়াতাড়ি। ফলে এই পরিযায়ী পাখিরাও আর কতদিন এই জলাশয় সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের বাসা বেঁধে রাখবে, সেটা দেখার অপেক্ষাতেই এই মুহূর্তে কালনা বনদপ্তর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন