Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৩

শখের কুকুরের মূল্য ২০ কোটি টাকা

 

Hobby-dog-is-worth-20-crores

সম্পদ দে : ‌মানুষের শখ কত রকমের হয়, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। কারোর দামি গাড়ির শখ থাকে, তো কারোর সোনা, রূপো, হীরের। শখের কারণে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেলেন অনেকে। তবে সোনা-রুপো কিংবা গাড়ি-বাড়ির পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও তা বোঝা যায়। 

কিন্তু কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে একটি কুকুর কিনলে, সেই শখ একেবারে জায়গা পেয়ে যায় অফবিট নিউজে। হিন্দিতে একটি উক্তি আছে, 'ভগবান যব দেতা হ্যায়, তো ছাপ্পার ফাড়কে দেতা হ্যায়।' আর এই কথাটি দিয়ে বাস্তবিক উদাহরণ দেওয়া যায় এক্ষেত্রে। 

ইন্ডিয়ান ডগ ব্রিডারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, ব্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা সতীশ। ব্যাঙ্গালোরের একজন বিখ্যাত ব্রিডার হিসেবে নাম রয়েছে সতীশের। বিভিন্ন জায়গায় কুকুরের শো থেকে তিনি ৩২ টি পুরস্কারও পেয়েছেন ইতিমধ্যে। তবে বলে না, 'শখ বড় বালাই'! আর সেটাই দেখা যায় সতীশের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি ২০ কোটি টাকা দিয়ে ককেশিয়ান শেফার্ড প্রজাতির একটি ব্রিডের কুকুর কিনে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোটা দেশবাসীকে। 

সূত্রের খবর, টাকা পয়সা সম্পর্কিত কোনও ব্যাপারে সতীশকে চিন্তা করতে হয় না কখনোই। এমনকি তাঁর জীবনের অন্যতম শখগুলির মধ্যে দামি সুপার বাইকের কালেকশন যেমন একটি, তেমনি আরেকটি হচ্ছে বিভিন্ন ব্রিডের কুকুর পোষার। বেঙ্গালুরুতে তার একটি বড়সড়ো 'কেনাল'ও রয়েছে। 'কেনাল' হলো বিভিন্ন ব্রিডের কুকুর রাখার ঘর। তবে জানার বিষয় হচ্ছে, কেন এত দামি এই ককেশিয়ান শেফার্ড ব্রিডের একটিমাত্র কুকুর।

ককেসিয়ান ব্রিডের কুকুর, ককেসিয় অঞ্চলের দেশগুলির এক ধরনের বড় পশুঅভিভাবক কুকুর। বিশেষত জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজানের মতো দেশগুলির একটি বড় গার্ডিয়ান কুকুর। প্রায় ১৯২০ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে ককেসাস পর্বতমালায় এবং দক্ষিণ রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই ব্রিডের কুকুরগুলি বেড়ে উঠছিল।

ককেসিয়ান ব্রিডের কুকুরগুলি প্রায় সিংহের মতো দেখতে হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক মেয়ে কুকুরের ওজন প্রায় ৫০ থেকে ৮০ কেজির কাছাকাছি বা তার থেকেও অধিক হতে পারে। এদের উচ্চতা হয় প্রায় ২৮ থেকে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত।  এর পাশাপাশি, এরা একপ্রকার পাহারাদার কুকুর এবং সেইসঙ্গে দারুন শিকারিও বটে। এদের ক্ষমতা কতটা তা বোঝা যায় এর থেকেই যে, এদেরকে লালন পালন করা হতো ভাল্লুকের সঙ্গে লড়াই করার জন্য। সেইজন্য এদেরকে অনেক সময় ভাল্লুক শিকারি কুকুর বা বেয়ার হান্টিং ডগও বলা হয়ে থাকে। এদের মোট আয়ু হয় ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্তই।

ব্যাঙ্গালোরের সতীশ কুমারের কাছে যে কুকুরটি আছে, সেটিও এই প্রজাতিরই। তার নাম রাখা হয়েছে 'কাডাবম হায়দার'। বয়স তার দেড় বছর। হায়দ্রাবাদেরই একজন ব্রিডারের কাছ থেকে এই কুকুরটি কিনেছিলেন সতীশ। সাধারণ কুকুরের থেকে আকারে প্রায় দুই থেকে তিন গুণ অবধি বড় হয় এই কুকুর। দুই পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালে একজন মানুষের থেকেও বেশি উচ্চতা হতে পারে এদের।

কুকুর পোষার শখ অনেকেরই থাকে। তবে ২০ কোটি টাকা মাত্র একটি কুকুরের পেছনে খরচ করা দেখেই বোঝা যায়, সতীশের এই কুকুর পোষার ক্ষেত্রে ভালোবাসা ঠিক কতটা। এই শারমিনওটি কেনার পরে সতীশ কুমার বলছেন, হায়দার আসলেই খুব বন্ধুত্বপূর্ণ কুকুর। বিশাল আকারের হলেও মোটেই হিংস্র নয় সে। 

বর্তমানে সতীশবাবুর বাড়িতেই একটি বড় এয়ারকন্ডিশনড ঘরে থাকে সে। যেহেতু এই ধরনের কুকুর শীতপ্রধান দেশগুলির ব্রিড, সেই জন্য বিশাল পশমে ঘেরা থাকে এদের শরীর। তাই যাতে হায়দারের গরম না লাগে, সেই জন্য তার ঘরে পাওয়ারফুল এয়ার কন্ডিশনার লাগিয়ে রেখেছেন সতীশ বাবু।

তবে কেবলই হায়দার নয়। এর আগেও প্রচুর দামি দামি ব্রিডের কুকুর কিনেছেন সতীশ। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি দুটি 'কোরিয়ান মাসটিফ' কিনেছিলেন। চমকের ব্যাপার এখানেও। কারণ, এই প্রজাতির কুকুরের দাম পড়েছিল প্রায় ১ কোটি টাকা। সেই সময়ও হয়তো বেশি দূরে নেই, যখন এইরকমভাবেই চলতে চলতে সতীশবাবু নিজের নামে করে ফেলবেন একটি আস্ত 'গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড'। 

তবে অনেকেই আছেন, যারা সতীশবাবুর এই পদক্ষেপকে সোশ্যাল মিডিয়ায় 'ট্রোল' করছেন। তাদের মতে 'একটিমাত্র কুকুরের পেছনে এত খরচ করার কোনও প্রয়োজনই ছিল না।' আবার অনেকের মতামত, 'সতীশবাবুর টাকা সতীশবাবু কোথায় খরচ করবেন, সেটা সম্পূর্ণই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এতে নাক গলানো উচিত নয় কারো।' 

তবে এত কথাবার্তার কোনওটাতেই কান দিচ্ছেন না তিনি। সতীশবাবুর ইচ্ছা, ভবিষ্যতেও যদি তাঁর কোনও কুকুর পছন্দ হয়, তবে সেটা অবশ্যই তিনি কেনার ব্যাপারে ভাববেন, কোনও টাকা পয়সার ব্যাপারে চিন্তা না করেই।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন