Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

বিবর্তনের ধারায় দেবী দুর্গা

Goddess-Durga-in-Evolution-Part-1

বিবর্তনের ধারায় দেবী দুর্গা  

পীযূষ হালদার

আদিকালে মাতৃকা উপাসনার ধারা যখন কৃষি পূর্ব কাল থেকে শুরু করে প্রাচীনকালে শস্য কামনার ধর্মাচারের সঙ্গে মিলে গেল, তারপরেই দেবী দুর্গার পৌরাণিক রূপের উদ্ভব হয়। 

পৌরাণিক দুর্গার বিবর্তনের পটভূমিকায় দেবীর ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি, অসুর নিধনে পৌরাণিক কাহিনি, লোকায়ত বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় মানুষের মনে গেঁথে গেল। কোনও কোনও পৌরাণিক গল্পকথায় সাজানো হলেও তাতে নৃতত্ত্ব ও সমাজতাত্ত্বিক ভিত্তি আছে। 

মার্কন্ডেয়পুরাণে দেবী স্বয়ং শাকম্ভরী রূপে পরিচিত। দেবীর শাকম্ভরী মূর্তির সঙ্গে কৃষিভিত্তিক সভ্যতার একটা সম্পর্ক দেখা যায়। পুরাকালে মূলত দেবীকে খাদ্যশস্যের দেবী হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। শাকম্ভরী সংক্রান্ত ধারণা সিন্ধু সভ্যতার যুগে প্রচলিত ছিল। হরপ্পায় আবিষ্কৃত একটা পোড়ামাটির শিল থেকে তা বোঝা যায়। 

চতুষ্কোণ ওই সিলে নগ্ন নারী মূর্তির জরায়ু থেকে বেরিয়ে এসেছে শস্য-পল্লব। এলাহাবাদের ভিটা গ্রামে পাওয়া একটি শিলমোহরে যে নারীমূর্তি চিত্রিত আছে, তাতে মৃনাল যুক্ত পদ্মফুল কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী। তাই বিশেষজ্ঞরা সিন্ধু সভ্যতার আমলে মাতৃদেবতার শস্যদায়িনী রূপের স্বীকৃতি দেন। 

কোনও এক স্ত্রী দেবতা কর্তৃক মহিষ বধের প্রত্ননিদর্শন খ্রিস্টপূর্ব সময়ে সুমেরীয় থেকে উদ্ধার করা হয়। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত এই শিলার বয়স সাড়ে তিন হাজার বছর। আবার ইতিহাসবিদ শশিভূষণ দাশগুপ্ত বলেছেন, ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে মন্খমের জাতিকে জয় করাই হল দুর্গার মহিষ বিজয়ের আদিরূপ। 

দেবী দুর্গার সঙ্গে প্রাচীনকালের অন্যান্য জাতির আরাধ্য মাতৃমূর্তির মিল পাওয়া যায়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধ প্রিয়া Virgo দেবী হলেন দুর্গা। মধ্যপ্রাচ্যের পর্বতবাহিনী সিংহবাহিনী 'সিবিলী' দেবীর সঙ্গে উমা  হৈমবতীর মিল পাওয়া যায়। 

গিরিরাজ হিমালয় কন্যা উমা শব্দটির সঙ্গে ব্যাবিলনীয় 'উম্ম' শব্দের মিল আছে। এই উম্ম দেবী গ্রিসে 'মাইয়া' দেবী, ব্যাবিলনে 'ইশতার', এশিয়া মাইনরে 'তনইস', সিমেটিকদের আরাধ্য দেবী 'নিনা'। এসমস্ত দেবীর বাহন হচ্ছে সিংহ। এমনকি এদের স্বামীর বাহনও ষাঁড়। এ থেকেই দেবী দুর্গার সাথে এদের মিল বোঝা যায়। 

পুরান মতে দেবী 'দুর্গা' নামের বিভিন্ন কারণ আছে। স্কন্দপুরাণ অনুসারে দুর্গাসুরকে বধ করে দেবী 'দুর্গা' নামে পরিচিত হন। মার্কন্ডেয়পুরাণে দেবী নিজেই বলেছেন, 'দুর্গম' নামক মহাসুরকে বধ করে দুর্গা নামে বিখ্যাত হন। 

মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা প্রাচীনকালে ছিলেন ব্যাঘ্র বাহিনী। পরবর্তীকালে তিনি সিংহবাহিনী দেবী রূপে পূজিত হন। এখনও ব্যাঘ্র বাহিনী মূর্তির আমাদের দেশে যথেষ্ট প্রাধান্য আছে। মহারাষ্ট্র, জুনাগর, পাঞ্জাবে ব্যাঘ্রাসীনা মূর্তি দেখা যায়। কুষানকালীন সময়ে প্রাপ্ত কিছু স্বর্ণমুদ্রায় সিংহবাহিনী অম্বিকা মূর্তি দেখা যায়। 

ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পূর্বভারতে মাতৃপূজা ও শক্তি ধর্মের প্রাধান্য দেখা যায়। মার্কন্ডেয় পুরাণে দেবী দুর্গার দশভূজা মৃন্ময়ী মূর্তির উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে তাকে সপরিবারে দেখানো হয়নি। 

মধ্যযুগের শেষভাগে দুর্গার মহাদেবী রূপকল্পনা কে বাংলার ঘরে ঘরে আদরণীয় ও সম্মানীয় করার জন্য পন্ডিত রঘুনন্দন তার অসাধারণ কল্পনা শক্তির প্রভাবে পুত্র কন্যা সহ মৃন্ময়ী দুর্গাপ্রতিমা পূজার বিধান দেন। সেই থেকেই শারদীয় উৎসবের দুর্গাপ্রতিমাকে আমরা সপরিবারে দেখতে পাই। 

ঋণী– ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় (সংস্কৃত বিভাগের প্রধান, কালনা কলেজ) এর লেখা নিবন্ধ থেকে। 






             ‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন