সৌদীপ ভট্টাচার্য : বন্দুক, লাঠির বদলে হাতে চক, ডাস্টার। খাকি পোশাকে কোনও পুলিশকর্মীকে এমন অবস্থায় দেখলে স্বাভাবিকভাবেই একটু অবাক হতে হয়। আসলে অবাক হবার মতোই ঘটনা। কারণ, এই পুলিশকর্মীরা তাঁদের নিজেদের কাজের ফাঁকে শিক্ষকতার কাজও করছেন।
উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল এলাকার মানুষের কাছে গুলি, বোমার শব্দ নতুন কিছু নয়। অবস্থান এবং আর্থ–সামাজিক কারণে এই এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম লেগেই থাকে। এমন একটি পরিবেশে সেখানকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় অনেকক্ষেত্রেই ব্যাঘাত ঘটে।
শিক্ষা আনে চেতনা। আর সেই আপ্তবাক্যকে মনে রেখে এই এলাকার অস্থির পরিবেশের বদল ঘটাতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন জগদ্দল থানার আইসি প্রদীপ কুমার দাঁ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এবং থানার সহকর্মীদের সহযোগিতায় এলাকায় গড়ে তুলেছেন একটি অবৈতনিক কোচিং সেন্টার।
'নবদিশা' নামের এই কোচিং সেন্টারে আপাতত নবম এবং দশম শ্রেণীর পড়ুয়াদের বিনামূল্যে বিভিন্ন বিষয়ে কোচিং দেওয়া হবে। আর সেখানে নিজেদের ব্যস্ততম কাজের মধ্যে থেকে সময় বের করে ক্লাস নেবেন থানার পুলিশ কর্মীরাই। প্রয়োজনে বাইরে থেকেও শিক্ষক আনা হবে।
১ সেপ্টেম্বর পুলিশ দিবস উপলক্ষ্যে জগদ্দল থানার মোমিনপাড়া এলাকায় এই কোচিং সেন্টার চালু করা হয়। প্রাথমিকভাবে ৪৫ জন পড়ুয়া এখানে তাদের নাম নথিভুক্ত করেছে। আগামী দিনে যদি আরও পড়ুয়া নাম নথিভূক্ত করে, তাহলে ব্যাচের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
শুধু মোমিনপাড়া নয়, ভালো সাড়া মিললে ভবিষ্যতে এই থানার অন্য এলাকাতেও এমন কোচিং সেন্টার গড়ে তোলা হবে। ভাটপাড়া এলাকায় পুলিশের একটি নিজস্ব কম্পিউটার সেন্টার আছে।
পড়াশোনার পাশাপাশি কোনও পড়ুয়া যদি কম্পিউটার শেখার ক্ষেত্রে আগ্রহপ্রকাশ করে, তাহলে তাদেরকে কম্পিউটার শেখানোরও ব্যবস্থা করা হবে জানালেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি নর্থ শ্রীহরি পান্ডে।
শিক্ষা এমনই একটি হাতিয়ার, যা দিয়ে একজন শিক্ষার্থী তার জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। নতুন এই কোচিং সেন্টারে আসা পড়ুয়াদের সেই স্বপ্নই দেখাচ্ছেন জগদ্দল থানার পুলিশ কর্মীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন