Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২

ভোকেশনাল শিক্ষাই আগামীর অর্থনৈতিক দিশা

 ‌

Vocational-education

ভোকেশনাল শিক্ষাই আগামীর অর্থনৈতিক দিশা         

অজয় মজুমদার


বিজনদা অনেক দিনের পরিচিত মানুষ৷ ছেলেমেয়েদের কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, আর ভাই বলোনা। মেয়ের বিয়ে দিতে পারলাম না, তাই ডিসট্যান্সে এমএ–তে ভর্তি করে দিলাম। টাইম পাস করুক, মনটা ভালো থাকবে। আসলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনাটা খানিকটা টাইম পাস করার মতই৷ ভালোবেসে শিক্ষা গ্রহণ করার সংখ্যা ১০ শতাংশের এর মত হবে৷ 

দিকে দিকে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে৷ সেখানে অপ্রয়োজনীয় সময় পাস করার মতো গতানুগতিক কিছু বিষয় পড়ানো হচ্ছে। তবুতো কিছুদিন ক্যান্টিনের পাখার হাওয়া যুবক-যুবতীদের আনন্দের একটা জায়গা হয়ে উঠেছে। কোর্স শেষ হওয়ার পর মুখের হাসি বিলীন৷ সবাই তখন থেকেই নেই রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে পড়ল। 

আসলে যেদিন থেকে বাঙালি সহ ভারতবাসী ডিগ্রির মতো ত্যাগ করতে পারবে, সেদিন থেকেই প্রকৃত শিক্ষা শুরুর মানসিকতা শুরু হবে। বর্তমান প্রচলিত এই শিক্ষা- না পারছে মানুষ তৈরি করতে, না পারছে ভালো কর্মী তৈরি করতে৷ 

চীন অর্থনৈতিকভাবে নিজেকে শক্তিশালী করার জন্য ১২ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। চীন সরকারের বক্তব্য ছিল, এত ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কি করবে ? কোথায় চাকরি পাবে তারা ? এত হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান চীনে নেই৷ এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত কিভাবে নাগরিকদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে৷ 

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার পেছনে চীন সরকার খুবই সহজ যুক্তি দেখিয়েছিল। এত পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ কি ? তারা কোথায় চাকরি পাবে ? এত পড়ুয়ার চাকরি দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান চীনে তখন ছিল না৷ তার মানে এরা লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত বেকার হবে৷ তাই চীন সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, দেশের ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ট্রেড কোর্সে আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার। 

স্বল্প মেয়াদী ট্রেড কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর চীনের ছেলেমেয়েরা সাবলম্বী হয়ে ওঠে৷ চীনের প্রতিটি বাড়ি হয়ে ওঠে এক একটি ছোট ছোট কারখানায়। পরিবারের সবাই কাজ করতে শুরু করে৷ ফ্যাক্টরি আলাদা করে নির্মাণ করতে হয়নি। বাড়তি খরচও লাগেনি৷ ফলে ধীরে ধীরে পণ্যের উৎপাদন খরচও কমে যায়৷ 

আজকের দিনে এসে যে কোনও পণ্য এত সস্তায় উৎপাদন করার সক্ষমতার দিক দিয়ে চীনের আশেপাশেও কোনও দেশ এখনও ঘেষতে পারেনি। দুনিয়া জুড়ে চীনা পণ্যের কদর বাড়ছে৷ 'মেড ইন চায়না'‌ কথাটার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত৷ 

ভোকেশনাল ট্রেনিং দিতে হবে৷ সেখানে প্রথাগত লেখাপড়া থেকে অনেক বেশি নৈপুণ্যতা ও একাগ্রতা প্রয়োজন হয়। আর মনে রাখতে হবে, এমএ পাস বলে আলাদা করে দেখার দিন কিন্তু শেষ৷ সেইজন্য একটি মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের ডোম নিয়োগে এমএ, এমএসসি, পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের গাদা গাদা আবেদনপত্র জমা পড়েছিল৷ 

আর সেই কারণেই অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা ছেড়ে প্রয়োজনীয় প্রকৃত ভোকেশনাল শিক্ষা প্রবর্তন করার দিকে নজর দেওয়া ভীষণ প্রয়োজন৷ ভারতবর্ষ ভুল শিক্ষানীতিতে এগিয়ে চলেছে দিনের পর দিন। 

রাজ্যগুলিও খানিকটা একই পথে চলছে। তাই ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে না তুলে, কর্মী মানুষ তৈরীর শিক্ষায় শিক্ষিত করা হোক৷ আধিকারিকদের কাছে আবেদন, সেইরকমভাবে পরিকল্পনা তৈরি করা হোক৷ 

শিক্ষা প্রকৃত মানুষ তৈরি করে। শিক্ষা তৈরি করে সৎ, নির্ভীক ও চাটুকারহীন মানুষ। বর্তমান শিক্ষা নীতিহীন করে তুলেছে, অমানুষ করে তুলেছে, দেশকে তাচ্ছিল্য করা শিখিয়েছে, দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছে। 

সুতরাং, এটা কোনও শিক্ষাই হতে পারে না। শিক্ষা দেওয়া হোক প্রকৃত শিক্ষার ক্ষুধা আছে, এমন শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাকে যতদিন পণ্য মনে করা হবে, ততদিন এই শিক্ষা কোনও কাজে লাগবে না, প্রকৃত মানব সম্পদ তৈরীতে অক্ষম হবে।‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন