Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বনগাঁ মহকুমার মানুষের ভূমিকা (‌দ্বিতীয় পর্ব)‌

 ‌‌

Freedom-movement-2

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বনগাঁ মহকুমার মানুষের ভূমিকা (‌দ্বিতীয় পর্ব)‌          

পীযূষ হালদার 

*ডঃ অমূল্যচন্দ্র উকিল—  জন্ম - ১৪/১১/১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে বনগাঁর কুন্দিপুর গ্রামে। বনগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এমবিবিএস পাস করেন। তারপর ডক্তারির উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশে যান। অধ্যায়ন শেষ করে ঘরে ফিরে বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি উড়িষ্যার বালেশ্বরে বুড়িবালামের তীরে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধের নেতা বাঘাযতীন বা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং গোপাল মুখোপাধ্যায়ের সহযোগী ছিলেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বৈপ্লবিক কাজকর্মের জন্য ২০ মাসের জন্য কারারুদ্ধ হন। দৌলতপুর কলেজের বিপ্লবী অধ্যাপক ভূপেন দত্তর গ্রেপ্তারের পর অমূল্যচন্দ্র উকিলকে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী করে রাখা হয়। 


*সুরেন্দ্রনাথ মিত্র ও খগেন্দ্রবিহারি মিত্র— তাঁরা দুজনেই পাটশিমুলিয়া গ্রামের সন্তান। সুরেন্দ্রনাথ মিত্র বনগাঁ দেওয়ানী আদালতের উকিল ছিলেন। সেই সময়ে যশোর জেলার সর্বময়কর্তা মিঃ এলিস সাহেব বনগাঁর মানুষের উপর অত্যাচার চালাচ্ছিলেন। সুরেন্দ্রনাথ মিত্র তখন বনগাঁ কংগ্রেসের কাজকর্ম এবং আন্দোলন পরিচালনা করেন। সেই কারণে এলিস সাহেবের হাতে তাকে বারবার অত্যাচারিত হতে হয়। মিত্র পরিবারের আর এক সন্তান খগেন্দ্রবিহারী মিত্র কলকাতায় রিপন কলেজে পড়ার সময় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগদান করেন।        

*তারকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়—  পাটশিমুলিয়া গ্রামের আর এক সুসন্তান। এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন। এই একনিষ্ঠ কংগ্রেস কর্মী ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক হন। নেতাজী সুভাষচন্দ্রের অনুগামী এই কংগ্রেস কর্মী বহুবার কারাবরণ করেছেন। বারবার তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল।        


*বিজয় ঘোষ ও সুশীল ঘোষ—  ছয়ঘরিয়ার জমিদার পরিবারের সন্তান। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বনগাঁ কংগ্রেসের পার্টি অফিস ছিল ছয়ঘরিয়ার ঘোষ বাড়িতে। বন্দবিলা লবণ সত্যাগ্রহে এখান থেকেই বনগাঁর ছাত্ররা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সেই আক্রোশে এলিস সাহেব ছয়ঘরিয়ায় এসে বিজয় ঘোষের উপর অত্যাচার শুরু করে। পরিবারের বিধবা বৃদ্ধা মাছ কাটা বটি নিয়ে এলিস সাহেবকে তাড়া করলে তবেই তিনি রেহাই পান। 


অপরদিকে, বিজয় ঘোষের পুত্র সুশীল ঘোষের নেতৃত্বে বন্দবিলা লবণ আন্দোলনে বনগাঁ হাইস্কুলের ছাত্ররা অংশগ্রহণ করার জন্য বন্দবিলা যাওয়ার পথে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর ট্রেনে করে গদখালি স্টেশনে নামিয়ে তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়। বনগাঁ কংগ্রেস অফিসে সেই খবর আসলে তাদেরকে উদ্ধার করে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। 


*শহীদ সত্যেন চক্রবর্তী—  জন্ম ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে বনগাঁর কোড়ারবাগানে। এই বীর সন্তান আসাম অয়েল কোম্পানিতে চাকরি গ্রহণ করেন। চাকরিরত অবস্থায় সেখানে শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলন শুরু করেন। সেই সময় কলকাতার মেয়র সন্তোষ বসু ডিগবয় শহরে প্রতিবাদ ধর্মঘটের ডাক দেন। 

এই ধর্মঘটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যেন চক্রবর্তী শ্রমিকদের মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলেন। তাঁদের রাস্তা আটকায় তেল কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।  গ্রেজব্রুক টেন্স ও স্মেলের রিভলবার থেকে গুলি চলে। সামনের সারিতে থাকা সত্যেন, প্রাণেশ্বর চক্রবর্তী ও চন্ডী আহির গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে প‌ড়েন। ১৮ এপ্রিল ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদদের তালিকায় স্থান পেল আরও তিন শহীদের নাম। তাই সত্যেন চক্রবর্তীকে স্বাধীনতা আন্দোলনে বনগাঁ মহকুমার একমাত্র শহীদ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন