Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

দেশভাগ, স্বাধীনতা ও বনগ্রাম মহকুমা (‌প্রথম পর্ব)‌

 ‌

Bongaon-sub-division

দেশভাগ, স্বাধীনতা ও বনগ্রাম মহকুমা (‌প্রথম পর্ব)‌     

        রবীন্দ্রনাথ তরফদার

বঙ্গদেশ বা বাংলা একটি অতি প্রাচীন জনপদ। ঋগ্বেদাশ্রয়ী ঐতরেয় আরণ্যকে সর্বপ্রথম বঙ্গের উল্লেখ দেখা যায়। এছাড়া বৌধায়নসূত্র, রামায়ণ, মহাভারতের আদিপর্ব, মনুসংহিতা, কালিদাসের রঘুবংশ প্রভৃতি প্রাচীন গ্রন্থে বঙ্গদেশ নামের উল্লেখ আছে। তবে ১৯৪৭ সালে দেশভাগ ও স্বাধীনতা লাভের আগে ও পরে নদীয়া, যশোর এবং ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্ভুক্ত থাকাকালীন আজকের বনগ্রাম মহকুমার কোনও প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে আমরা খুব বেশি অবগত নই। 

বনগ্রামের ইতিহাস বলতে যা বোঝায়, তা খুব বেশি হলে বিগত পাঁচশো বছরের কাহিনী, যার বেশির ভাগ আনুমানিক বা জনশ্রুতি মাত্র, কারণ কোনও ঘটনার সমকালীন লিখিত বিবরণ ইতিহাস হিসাবে যতটা প্রামাণিকতা দাবি করতে পারে, দুর্ভাগ্যবশত তা আমাদের হাতে নেই। 

পঞ্চদশ শতক থেকে যশোর ইতিহাসের যুগের পর্যায়ভুক্ত হয় এবং যশোরের স্বাধীন রাজা প্রতাপাদিত্যের সময়কাল থেকে একটা ধারাবাহিক ইতিহাসের পরিচয় পাওয়া যায়। ১৫৮৫ সাল থেকে ১৬১০ সাল পর্যন্ত প্রতাপাদিত্যের রাজত্বকাল। রাজ্যাভিষেকের আগে ১৫৮০ সালে প্রতাপ যশোর রাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে সম্রাট আকবরের রাজসভায় যাত্রা করেন। সেই সময় তাঁর সহযাত্রীদলে ছিলেন বনগ্রামবাসী কালীচরণ রায়। 

কালীচরণ ছিলেন যশোর রাজ্যের নৌবাহিনীর অধ্যক্ষ। এ থেকেই বোঝা যায় তখন যশোর সন্নিহিত বনগ্রাম অঞ্চলে ইছামতী নদীকেন্দ্রিক জনবসতি গড়ে উঠেছিল। তবে উল্লেখযোগ্য কোনও বাণিজ্যকেন্দ্র বা কোনও শিক্ষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল না। বেশির ভাগ অঞ্চলই ছিল বিল, বাঁওড়, জলাভূমি, নদী ও অরণ্যাবৃত।

এই সময় থেকে ১৮৬২ সালের শেষভাগে বনগ্রামকে মহকুমা হিসাবে ঘোষিত হওয়া পর্যন্ত বনগ্রামের জনজীবনে বিশেষ কোনও পরিবর্তন আসেনি। আসলে ইছামতি নদীর দুই তীরে বিস্তৃত একটি গ্রাম হিসাবেই বনগ্রামের পরিচিতি ছিল। ১৮৬৯ সালের ২৪ জুলাই কবি নবীনচন্দ্র সেন যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দেন। সন্নিহিত অঞ্চল বনগ্রাম সম্পর্কে তাঁর সম্যক ধারণা ছিল। 

তিনি তাঁর আত্মজীবনী 'আমার জীবন' গ্রন্থে লেখেনঃ-- ' গোটা বনগ্রামই তো বনজঙ্গলের রাজ্য ছিল একটা। মাঝে মাঝে এমন গভীর বন ছিল যে জনমানব ঢুকতে সাহস পেত না। তবে, এক শ্রেণির মানুষ ঢুকতো, থাকতো। তারা সভ্য সমাজের বাইরের লোক---দস্যু, ডাকাত '।

ঊনিশ শতকের কিছু আগে থেকেই ইংরেজ বণিকদের প্রলুব্ধ দৃষ্টি পড়ে ইছামতির পলিবিধৌত ঊর্বর জমি চিহ্নিত করে লাভজনক নীলচাষ করার দিকে। নদীয়া ও যশোর জেলা সহ সারা বাংলায় নীলচাষ কৃষকের ব্যাপক সর্বনাশ ঘটিয়েছিল। বনগ্রামের অদূরে ইছামতির তীরে গড়ে ওঠে বেঙ্গল ইন্ডিগো কনসার্ন। বেঙ্গল ইন্ডিগো কনসার্নের ম্যানেজার কুখ্যাত লারমোর সাহেব মোল্লাহাটিতে বাস করতেন। 

ইংরেজ নীলকর ও দেশীয় জমিদার ও রাজন্যবর্গের অত্যাচারে কৃষক ভূমিদাসে পরিণত হয়েছিল। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পরিণতিতে ঘটে সশস্ত্র নীলবিদ্রোহ। ১৮৫৯ সাল থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত হিন্দু–মুসলমান নির্বিশেষে ষাট লক্ষ কৃষক এই বিদ্রোহে যোগদান করে একে গণআন্দোলনে পরিণত করেছিলেন। এর ফলে ইংরেজ সরকার নীলচাষ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়। 

নীলবিদ্রোহের প্রেক্ষপটে সরকার নীলকরদের আয়ত্তে এনে প্রজাদের আইনগত সুযোগ বেশি দেবার জন্য নদীয়া, যশোর প্রভৃতি জেলায় কয়েকটি মহকুমা, আদালত ও থানার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৮৬২ সালের শেষভাগে নদীয়া জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ হর্সেল ও বারাসত জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ এ্যাসলে ইডেন বনগ্রামে আসেন এবং অত্যাচারিত কৃষকদের আশ্বস্ত করার জন্য বনগ্রামকে মহকুমা ঘোষণা করেন।

১৮৬৩ সালে প্রথম মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মিঃ সি. কুইনি আই.সি.এস.। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৮৩৪ সাল থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত বারাসত স্বতন্ত্র জেলা ছিল। ১৮৬১ সালে বারাসতকে ২৪ পরগণা জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। বারাসত হয় একটি মহকুমা।





1 টি মন্তব্য: