Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

গল্প : খুশির হাওয়া

 

Story-Khushi-Hawa

গল্প : খুশির হাওয়া

 পীযূষ হালদার 

এক --- 

বাঁশঝাড়ের মধ্যে থেকে একটা খস খস আওয়াজ হল। আওয়াজটা ভয় ধরানোর মতো বটে। আবার যে চিন্তা করছি, তা নাও হতে পারে। হতে পারে ধেড়ে ইঁদুর বাসা বেঁধেছে। এসব শব্দ তাদের চলাচলের। বাঁশের শুকনো পাতার বিছানার উপর দিয়ে চলাচল করছে হয়ত। তাছাড়া, শ্বাপদ, জন্তু-জানোয়ারের পায়ের শব্দ হওয়ার সম্ভাবনা আছে! আজন্মকাল এখানে থাকলাম, কোনদিন একটা শিয়ালের দেখাও পাইনি। শুনেছি বাঁশবাগানে অনেকে ইয়ে করে! এখন এই পূর্ব সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে একটা ছায়া মানবের অবয়ব স্পষ্ট হচ্ছে। 

হঠাৎ হাওয়ার ফিসফিসানি। না না, চন্দ্রবিন্দু দেওয়া কয়েকটা শব্দ! 

---- এঁই ভব, তুই আমার চেয়ারটাতে বসে পড়লি! এঁখন আমি যদি তোর ঘার মঁটকাই, তাহলে কেমন হবে বলত! 

আমি খানিকটা হকচকিয়ে গিয়ে ছায়া জায়গাটা ভাল করে লক্ষ্য করলাম। হ্যাঁ, ঠিক একটা ছায়া মূর্তি। অবিকল কালোকুলো মনিষ্যি মূর্তি। ঠিক করলাম, দমলে চলবে না। 

জিজ্ঞাসা করলাম --- আপনি কে? ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ? 

ওঁ বাবা, আবার আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করা হচ্ছে ! এর মধ্যে ভুলে গেলি! কালকেই তো কাচ ঢাকা গাড়িতে যখন আমাকে নিয়ে আসবে, তুই আমার গলায় রজনিগন্ধার মালা ছোঁয়া লাগার ভয়ে ছুড়ে দিবি। 

তো তো করে বললাম --- আপনি কে মশাই ! আপনার গলায় আমি মালা পরাতে যাব কেন বলুনতো! ওইভাবে মুখ লুকিয়ে, বাশঁ ঝাড়ের মধ্যে থেকে কথা বলা কোনও সভ্য মানুষের কাজ না। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলুন। 

----  নাঁ রে তোর সামনে দাঁড়াবার ক্ষমতা এখন আমার নেই। কালকের দিনটা যেতে দে, তারপর দেখবি তোর সঙ্গে মাঝেমাঝেই আমার আগানে-বাগানে দেখা হচ্ছে। 

---- আচ্ছা আপনি এতসব ভবিষ্যত বাণী করছেন, অথচ সামনে আসছেন না। আমি কিন্তু ক্রমে আপনাকে ভয় পাচ্ছি না। প্রথমবার আপনার কথা শুনে একটু ছ্যাঁকা লেগেছিল ঠিকই। এখন ভয়ভিতি চলে গিয়েছে,  আপনার সামনাসামনি দাঁড়াবার ইচ্ছা হচ্ছে। 

----  রোসো রোসো। একটু অপেক্ষা কর, তারপর কালকে জানতে পারবে আমি কে। এতদিন একসাথে মিশলাম, রাজনীতি করতে গিয়ে কত লড়াই-সংগ্রাম করলাম। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কত নতুন সূর্যোদয়ের গান করলাম। সেই সব দিনগুলোর কথা ভুলে মেরোছ। মনে কর-মনে কর। 

--- মনে করবটা কিভাবে। তার জন্য তো একটা ক্লু চাই। আপনি সামনাসামনি আসছেন না যে বদনখানা দেখে আপনাকে চিনব। আবার কথাও যা বলছেন, সব নাকি সুরে।  এসব ব্যাপারগুলো অশরীরী মানুষদের ক্ষেত্রে খাটে। তাহলে আপনি কি অশরীরী মানুষ ? তাও যদি হয়, শুনেছি তেনারা ভয় দেখান, ঘাড় মটকে দেন। আপনি তো সেসব কিছুই করছেন না। উল্টে বলছেন একসাথে পথ হেঁটেছি, একসাথে গান গেয়েছি, আবার লড়াই-সংগ্রামও করেছি একসাথে। এতসব সত্ত্বেও এত বড় একটা ব্লেম দিলেন আবার নামে। আমি নাকি আপনার চেয়ার দখল করেছি। 

চোয়াল শক্ত করে বললাম --- আমি আর এখানে দাঁড়িয়ে আপনার রসিকতা বা প্রলাপ কিছুই শুনতে পারছি না। স্কুল থেকে ফিরে এখনও বাড়ি ঢুকতে পারলাম না। চললাম। 

--- যা যা এখন বাড়ি যা। কালকে সকাল থেকেই বুঝতে পারবি। দেখতে পাবি লোকে লোকে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে। 


দুই ---- 

বাঁশবাগানের রাস্তাটুকু পার করে, শতখানেক হাত দূরে আমার বাড়ি। মাথা গরম অবস্থাতেই বাড়ি ঢুকলাম। এমনিতেই স্কুল থেকে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। বিন্দু, মানে আমার বউ ঘরে ঢুকতেই জিজ্ঞাসা করল  ---  হ্যাঁগো, তুমি সেই চেয়ারটায় আজকে বসেছিলে ? মাথার মধ্যে চড়াৎ করে লাফ মেরে উঠল, ---  আবার সেই চেয়ার ! যে চেয়ার এর জন্য ভূতের মত একটা লোক আমাকে দখলদার ভাবল। জীবনে কোনদিনও আমি কিছুই দখল করতে পারলাম না। সেই ছোট বয়স থেকে স্কুলে আমার পেন্সিল-রাবার অন্যরা দখল করে নিত। আমি বাধা দিলেই বলত --- কোম্পানি কি শুধু তোর একার জন্য তৈরি করেছে! এরকম পেন্সিল, রাবার আমিও কিনেছি, তাই এটা আমার। আমার জিনিস তোর বলে দাবি করিস কি করে! বুঝুন। সে না হয় সামান্য দু আনা, চার আনার ব্যাপার। আর আজ একি হল! একজন তো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলে দিল, আমি তার চেয়ার দখল করেছি। আর একজন! আমার আপন বউ সেও কিনা বলল --- চেয়ারে বসে ছিলে তুমি ! পক্ষান্তরে এই বলাটাও তো 'চেয়ার দখল করেছ' বলার শামিল। 

বিন্দুকে আমি তেড়ে-ফুঁড়ে বললাম --- তুমি দেখি ভুতু বাবুর মত আমাকে চেয়ার দখল করার কথা বলছ।  সারা জীবন আমি কারোর একটা গুলি–মার্বেল দখল করতে পারলাম না, আর কিনা চেয়ার দখল করব ! 

বিন্দুও কম যায়না। আর এককাঠি উঁচু গলায় বলল --- নির্ঘাত আজকে তোমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছে। কি সব পাগলের মত কথাবার্তা বলছ। আমি তোমাকে কখন বললাম, চেয়ার দখল করেছ! আসলে এখন বুঝতে পারছি, ওইরকম রিভলভিং চেয়ারে বসলে সকলেরই প্রথম প্রথম মাথাটা একটু পাগলের মতোই হয়ে যায়! মাথা ঘুরতে থাকে। তোমারও ঠিক তাই হয়েছে। আমি তোমার কাছে জানতে চাইছিলাম,  তুমি কি স্কুলের চার্জ বুঝে নিয়েছ! আর চার্জ বুঝলেই তো তোমাকে ওই চেয়ারে বসতে হবে। তাতেই তুমি মনে করলে, আমি বলেছি চেয়ার দখল করেছ ! মনে নেই কালকে রাতে কত আদিখ্যেতা করেছিলে, --- আ হা হা কি সুন্দর ব্যাপার! সামান্য একটা প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার হয়ে, ওইরকম একটা রিভলভি এক্সিকিউটিভ চেয়ারে বসতে পারব। চেয়ারে বসার কথা বলা, আমার ঘাট হয়েছে। আর কিছু বলতে হবেনা তোমাকে। 

বিন্দুর কথা শুনে এবার বুঝতে পারলাম এত সময় ধরে ভুল আমারই হচ্ছিল। আসলে টিচার ইনচার্জ হিসেবে স্কুলের চার্জ নেওয়া সেটা একটা চেয়ার দখলের শামিল। তার মানেই তো ভবিষ্যতের হেডমাস্টার। হেডমাস্টারের চেয়ার বলে কথা! হেডমাস্টার চলে যাবে আবার হেডমাস্টার আসবে। সকলেই ভাববেন এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। হ্যাঁ, এটা স্বাভাবিক ঘটনা ঠিকই! কিন্তু যদি একটা সামান্য প্রাইমারি স্কুলের অফিস ঘরের হেডমাস্টারের বসার রিভলভিং এক্সিকিউটিভ চেয়ার হয়, তার অর্থমূল্যের থেকেও মর্যাদাটা অনেক বেশি। বিশেষ করে সেটার উপর কারো যদি মনে মনে লালায়িত বাসনা থাকে, 'এই চেয়ারটা ভবিষ্যতে আমারই' তাহলে তো তার মূল্য অপরিসীম। 

আমি আজকে একটা শতাধিক বছরের পুরনো প্রাইমারি স্কুলের টিচার ইনচার্জ হিসাবে চার্জ বুঝে নিলাম। যেহেতু একসময় পাঠশালা থেকে এখন একটা প্রাইমারি স্কুলে উত্তীর্ণ হয়েছে, সেই জন্য এই স্কুলের প্রাচীনতম তকমা জেলাস্তর পর্যন্ত সেঁটে আছে। আমি অন্য আরেকটা স্কুলের সহশিক্ষক হিসেবে নামডাক করেছিলাম। ভবিষ্যতের চিন্তা করে বর্তমান এই স্কুলে আমাকে ট্র্যান্সফার করা হয়েছিল। বয়সের দিক থেকে সিনিয়ার হিসেবে আমারই প্রাপ্য ছিল এই স্কুলের হেডমাস্টারের পোস্টটা। 

আমাদের এই ছোট্ট শহরে সরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে ভাল শিক্ষা দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। মূল প্রতিযোগিতাটা ছিল অন্য জায়গায়। ভাল শিক্ষক মানে ভাল টিউশনি। আমি একটা মারকুটে ভাল শিক্ষক হিসাবে বাজার দাম অনেকটা ওপরে ওঠাতে পেরেছি। সেই সূত্র ধরে শহরে এক নম্বর শিক্ষক হিসেবে নাম হয়েছে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বীও কম না! অর্জুন হচ্ছে আমার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি। তবুও কি করে জানি আমার নাম এক নম্বর শিক্ষক হিসেবে প্রতিপত্তি লাভ করল। আমাকে প্রায় গব্বর সিং এর জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল অভিভাবকরা। ছোট ছোট বাচ্চাদের ভয় দেখাত --- এবার তোর জন্য ভবানী মাস্টারকে টিউশনিতে রাখব।


তিন --- 

রাতে খানিকটা সুচিন্তা, খানিকটা দুঃশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। টুকটুক করে স্বপ্নরা চলে আসল। সে যে কতরকমের স্বপ্ন, তার ইয়ত্তা নেই। আহা আজকের শোয়াটা যেন একটা আলাদা আরামের। ফোমের তুলতুলে গদির উপরে মখমলের চাদর পাতা। তার মধ্যে বিন্দুর আদর-আপ্যায়নের স্বপ্নও আছে। সমাদর পেতেই আছি। হেডমাস্টার বলে কথা! এই সাথে জুটেছে এক্সিকিউটিভ রিভলভিং চেয়ার। চেয়ারটার বিষয়ে যে স্বপ্ন দেখেছি সেটাই বলি --- আমি বসে আছি মাল্টিমিলিয়নিয়ার বিজনেসম্যান এর কনফারেন্স রুমে। চেয়ারম্যান অফ দা কোম্পানিস। চেয়ারখানাও জাদরেল। হালকা রুম ফ্রেসনারের গন্ধে ম ম করছে। মাঝখানে টানা লম্বা কনফারেন্স টেবিল। তার দু পাশ দিয়ে আরও কয়েকটা এক্সিকিউটিভ চেয়ার সাজানো। তাতে কয়েকজন স্যুট টাই পরা গোমড়ামুখো এক্সিকিউটিভ বসে আছেন। কোম্পানির একটা গূঢ় বিষয়ে তারা রিপোর্টিং করছেন। আমি আমার চেয়ারে বসে একবার বাঁ দিকে একবার ডান দিকে ঘুরে তাদের ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছি।  

হঠাৎ দেখতে পেলাম নলিনীবালা প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টারের অফিসঘর। সেই ঘরের হেডমাস্টার মশায়ের  একটা বড় এক্সিকিউটিভ চেয়ারে আমি বসে আছি। অন্যসব সহ শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়েছে। হঠাৎ যেন চেয়ারটা একটু নড়ে উঠল। মনে হল কেউ চেয়ারের পায়া ধরে টানছে। স্বপ্নের মধ্যে চলে আসল গতদিনের বাঁশবাগানের সেই ঘটনার কথা। আমার পা দুটো চেয়ারের উপরে তুলে নিয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলাম। 

হঠাৎ বিন্দুর হাঁকডাকে বিছানার উপর উঠে বসলাম। রাত পুহিয়েছে। সুস্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন সব উধাও। কাকেরা ডাকাডাকি করছে। এই সময়ে বিন্দু ঘুম থেকে উঠে উঠোন ঝাট দেয়। গলার আওয়াজটা তীক্ষ্ণ 

--- আরে শুনছো। ওঠো ওঠো কি হয়েছে দেখো। অর্জুন দা মারা গিয়েছে। 

আমার ঘুমের ঘোর কাটার আগেই এই মৃত্যু সংবাদ। দু-একটা হাই তোলার সময় দিল না। একটুখানি  অতিরিক্ত অক্সিজেন নেব তাও হল না। দুবার হাই তুলব দুঢোক অক্সিজেন। সেসময় কই! বাইরে এসে দেখি গেটের পাশে গণেশের মা দাঁড়িয়ে আছে। পাড়ার এক নম্বর ইনফর্মার। বুঝলাম খবরটা এখান থেকে এসেছে। ঠিকা কাজ করে বেশ কয়েকটা বাড়িতে। তাই জনসংযোগ বেশি। 

আমি জিজ্ঞাসা করলাম -- তুমি খবর পেলে কি করে অর্জুন মারা গিয়েছে। 

আমিতো শিশুবাগানে দু বাড়িতে কাজ করি। সেখান থেকেই শুনলাম। পরশুদিন সন্ধ্যাবেলা হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল। গতকালকে বিকেলের দিকে মারা গেছে। ডাক্তাররা ধরতে পারিনি কি রোগ হয়েছে। অনেকে বলছে কোন একটা ছোঁয়াচে রোগ হয়েছিল। 

আমার যা শোনার শোনা হয়ে গিয়েছে। বিন্দুকে বললাম --- তাড়াতাড়ি চা-টা দাও। হসপিটালে যেতে হবে। স্কুলে যেতে হবে স্কুলে বডি আসবে। ফুলের মালা দিতে হবে। তারপরে শ্মশানঘাটেও যেতে হবে। 

অর্জুন ছিল এক সময়ের বন্ধু। একসাথে রাজনীতি করেছি। একসাথে চাকরিতে ঢুকেছি। তবুও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন বুঝতে পারছি গত কালকে পূর্ব সন্ধ্যায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাঁশ বাগানের মধ্যে কে দাঁড়িয়ে ছিল! আমার ভয় পাওয়া শুরু হল --- ও বলেছিল কালকে বুঝতে পারবি কি হয়! এখন যদি আমার চেয়ারটা নাড়িয়ে দেয়! সত্যিই ত কত দিন ধরে ওখানে ছিল। কত কষ্ট করেই না জায়গাটা তৈরি করেছিল। আগের হেডমাস্টারমশাইকে বলে কয়ে এক্সিকিউটিভ টেবিল, এক্সিকিউটিভ চেয়ারটা কিনিয়েছিল। অফিস ঘরটাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে বসেছিল। জানত এরপরেই ও হেডমাস্টার হবে। বেশ লোকবল তৈরি হয়েছিল। তারা যদি এখন ক্ষিপ্ত হয়! 

অথরিটি যখন আমাকে ট্রান্সফার করে এই স্কুলে পাঠিয়ে দিল, সেই থেকেই ওর সাথে একটা চোরাগুপ্তা লড়াই শুরু হয়ে গেল। অথরিটি সেটা বুঝতে পেরে ওকে অন্য স্কুলের ট্রান্সফার করল। ওর কষ্টার্জিত জায়গা আমি এসে দখল করেছি, সেই দুঃখ নিয়েই ও অন্য স্কুলে গিয়ে জয়েন করল। এখন আমি বুঝতে পারছি বাঁশবাগানে ও আমাকে সে কারণেই বলেছিল ---'আমার চেয়ারটা দখল করলি।'‌ 

আমি প্রথমে হসপিটালে গেলাম। ওর আত্মীয় পরিজনকে বললাম --  দাহ করতে যাওয়ার আগে আমাদের স্কুলে একবার নিয়ে আসবেন। স্কুলের বাচ্চারা সব থাকবে। 

সেই মতই সবকাজ হল। স্কুলে আসার পরে মালাটা একটু ছুড়েই দিলাম ওর গলায়। কানাঘুষো শুনছিলাম কি একটা ছোঁয়াচে রোগ, তাই। এরপর আমি শ্মশানযাত্রী হলাম। দাহকার্য শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। সামনে আবার সেই বাঁশতলা। কাছাকাছি এসেই বুক ঢিপঢিপ করা শুরু হল। আবার সেই ফিসফিস কথা --- এঁই ভব, বুঝতে পেরেছিস তো কেন বলেছিলাম! এঁবার আমার পালা। বেশি কিছু করব না। তুঁই যদি আমার কথা না শুনিস তোর ঘাড় মটকাব। শোন বলি, কাল থেকে স্কুলের অফিস ঘরের জানালার একটা কপাট খুলে রেখে আসবি। আমি রাতে অফিসে ঢুকে ওই চেয়ারে বসেবসেই স্কুল চালাব আর পাহারা দেব। তা না হলে যা বললাম তাই হবে। 

আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ওকে বললাম --- এ আর এমন কি কথা। তুই যা বলছিস তাই হবে। এ কথা বলার সাথে সাথে একটা খুশির হাওয়া আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। এরপর থেকে আমি প্রতিদিন স্কুল বন্ধ করে আসার সময় অফিস ঘরের একটা জানালার কপাট খুলে রেখে আসি। এখন আমিও খুশি, অর্জুনও খুশি।

                                          —————

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন