সমকালীন প্রতিবেদন : অর্থের লোভে নিজের দেওরের নাবালিকা মেয়েকে অবলীলায় পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়েছিল জেঠিমা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পুলিশের সহযোগিতায় পরে উদ্ধার হয় ওই নাবালিকা।
বনগাঁ আদালতে বিচারাধীন এই মামলায় অর্ন্তবর্তী আদেশে রাজ্য সরকারকে ওই নাবালিকার পরিবারের হাতে এককালীন ৮ লক্ষ টাকা এবং প্রতি মাসে চিকিৎসা বাবদ আরও ৮ হাজার টাকা দেওয়া নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এই নির্দেশ রাজ্যে নজির বলে মনে করছেন এই মামলার আইনজীবী।
ঘটনার সূত্রপাত দেড় বছর আগে। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের একটি সীমান্তবর্তী গ্রামের সাড়ে ১৩ বছরের নাবালিকাকে মাত্র ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নাবালিকার সৎ জেঠিমার বিরুদ্ধে। নাবালিকার বাবা–মা চপ বিক্রি করে কোনওরকমে সংসার চালান। দরিদ্র এই পরিবারে সারাদিন ঠাকুমার কাছে থাকতো ওই নাবালিকা ও তার ভাই।
গত বছরের ২ জানুয়ারী নাবালিকার জেঠিমা শ্যামলী দাস মল্লিক তাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে সমীরণ বিশ্বাস নামে এক পাচারকারীর হাতে তুলে দেয়। ঘটনার সময় নাবালিকাকে নেশার দ্রব্য খাইয়ে দেওয়ায় সে সব বুঝতে পারলেও প্রতিবাদ করার মতো শারীরিক অবস্থা ছিল না। এরপর নাবালিকাকে দুদিন স্থানীয় একটি গ্রামে আটকে রেখে পরে কলকাতার একটি ডেরায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, মেয়ের সন্ধানে বাগদা থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর স্থানীয় এবং জাতীয় স্তরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় জানা যায়, ওই নাবালিকাকে কলকাতার লেক থানার অর্ন্তগত ঢাকুরিয়া এলাকায় আটকে রাখা হয়েছে। পুলিশ এরপর নাবালিকাকে উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার হয় শ্যামলী। তার স্বামী প্রদীপ দাস এবং পাচারকারী সমীরণ বিশ্বাস।
নিজের জীবনে এতোবড় অঘটন ঘটে যাওয়ায় নাবালিকা এরপর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরে। ফলে তার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এই পরিস্থিতিতে আইনজীবী মারফত আদালতের কাছে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পকসো মামলা যুক্ত করে নতুন করে তদন্তের আবেদন জানানো হয়।
বনগাঁ আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শান্তনু মুখোপাধ্যায় সেই আবেদন মঞ্জুর করে ব্যতিক্রমী অর্ন্তবর্তী আদেশ দিয়েছেন বলে এই মামলার নাবালিকার পক্ষের আইনজীবী জয়দেব হালদার জানিয়েছেন।
বনগাঁ আদালতের আইনী সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনা পারিশ্রমিকে এই মামলা লড়ছেন আইনজীবী জয়দেব হালদার। তিনি আশাবাদী, এই মামলায় অভিযুক্তরা চরম শাস্তি পাবে। আর তাহলেই এই ধরনের সংগঠিত অপরাধ করার আগে অপরাধীরা ভাববে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন